6.7 C
New York
Friday, March 29, 2024

Buy now

অস্ট্রেলিয়া-ভারত ও বাংলাদেশকে নিয়ে বাশারের বিশ্বকাপ বিশ্লেষণ

তাঁর অধিনায়কত্বেই বিশ্ব ক্রিকেটে জায়গা করে নিয়েছিল বাংলাদেশ ক্রিকেট দল। ২০০৭ বিশ্বকাপ আজও বাংলাদেশ ক্রিকেটকে অনুপ্রাণিত করে। বলছিলাম হাবিবুল বাশারের কথা। যিনি এখন বাংলাদেশ ক্রিকেট দলের নির্বাচক। সদ্য আইসিসি ক্রিকেট ওয়ার্ল্ড কাপ ২০১৯ -এর জন্য দল ঘোষণা করেছে বিসিবি। সেই দল নিয়ে আশাবাদী সফলতম অধিনায়ক। নিজের ২০০৭-এর দলের থেকে এগিয়ে রাখছেন এই দলকেই। লক্ষ্য ভাল ক্রিকেট, তা হলেই আসবে প্রত্যাশিত ফল। বিশ্বকাপে ভারত,পাকিস্তান ও বাংলাদেশকে নিয়ে সম্ভবনার কথা শোনালেন প্রাক্তন অধিনায়ক ও বর্তমান নির্বাচক হাবিবুল বাশার।

• বিশ্বকাপ দল ঘোষণা হয়ে গিয়েছে, এই দলকে নিয়ে কতটা প্রত্যাশা?

হাবিবুল: অনেকটাই প্রত্যাশা। গত দু’বছর ধরে এই দলটাকে আমরা তৈরি করছিলাম। এ বার যা ফরম্যাট, তাতে খেলাটা খুবই কঠিন হবে সবার জন্য। তবে, প্রথম লক্ষ্য তো অবশ্যই থাকবে ভাল খেলা এবং সেমিফাইনালে পৌঁছনো। সেমিফাইনালে যেতে পারলে তার পরেরটা ভাবা যাবে। তবে তারও আগে ভাল ক্রিকেট খেলা।

• দলে এমন চার জন ক্রিকেটার রয়েছেন যাঁরা চোটের জন্য বাইরে দীর্ঘ দিন। কোন আত্মবিশ্বাসের জায়গা থেকে তাদের বিশ্বকাপ দলে রাখা হল?

হাবিবুল: ওদের যা চোট-আঘাত ছিল তা খুবই সামান্য। সকলেই এখন পুরো ফিট। ভাল খেলার মতো জায়গায় রয়েছেন। কিন্তু বিশ্বকাপের কথা মাথায় রেখেই সবাইকে বিশ্রাম দেওয়া হয়েছিল। তার আগে ওঁরা টানা খেলছিলেন। রিহ্যাবের পাশাপাশি ওঁরা যাতে বিশ্বকাপের জন্য পুরোপুরি তৈরি হয়ে উঠতে পারেন, সে কারণেই বিশ্রাম দেওয়া হয়েছিল। ওঁদের বিশ্বকাপ খেলতে কোনও বাধা হবে বলে আমার মনে হয় না।

• বিশ্বকাপের আগের প্রস্তুতির কী পরিকল্পনা?

হাবিবুল: আমরা শেষ আন্তজার্তিক টুর্নামেন্ট খেলেছি নিউজিল্যান্ডের বিরুদ্ধে। এই মুহূর্তে ৫০ ওভারের টুর্নামেন্ট— বাংলাদেশ প্রিমিয়ার লিগ চলছে। সেখানেও কিছুটা প্রস্তুতি হচ্ছে। আর শেষ প্রস্তুতি আমরা নেব আয়ারল্যান্ডে। সেখানে আয়ারল্যান্ড আর ওয়েস্ট ইন্ডিজের সঙ্গে একটা ত্রিদেশীয় টুর্নামেন্ট খেলব। কারণ আয়ারল্যান্ড আর ইংল্যান্ডের আবহাওয়া প্রায় এক। ওখানে খেললে বিশ্বকাপে ইংল্যান্ডের আবহাওয়ার সঙ্গে মানিয়ে নিতে সুবিধে হবে।

• ইংল্যান্ডের আবহাওয়ায় কোন দল বেশি সুবিধা পাবে বলে মনে হয়?

হাবিবুল: জুনে বিশ্বকাপ। তখন ইংল্যান্ডে মিড সামার। সেই চেনা ইংল্যান্ডের আবহাওয়ার মধ্যে পড়তে হবে না। তবে একটু মেঘলা হলেই ইংল্যান্ডের পরিস্থিতি বদলে যায়। তবুও এই পরিস্থিতিতে উপমহাদেশের দেশগুলো সুবিধে পাবে। কিন্তু এ বার কিন্তু হাইস্কোরিং ম্যাচ হওয়ার পুরো সম্ভাবনা রয়েছে। ইংল্যান্ডে সবাই ফাস্ট বোলিংকে বেশি গুরুত্ব দেয়। কিন্তু এ বার স্পিনাররাও সাহায্য পাবে। ব্যাটে-বলে যে দিন যে পারফর্ম করতে পারবে, সেই দিনটা তাদেরই হবে।

বিশ্বকাপের আগে আইপিএল কতটা ক্লান্তি তৈরি করছে?

হাবিবুল: এখন না ক্রিকেটটা বদলে গিয়েছে। এ রকম পরিস্থিতির মধ্যেই সারা বছর ক্রিকেট খেলে দেশগুলো। অনেক খেলা। আর সকলেই পেশাদার। সবাই জানে কোথায় থামতে হবে। এই প্রজন্মের ক্রিকেটারদের কাছে মূলমন্ত্র ফিটনেস। সবাই খুব ফিট। আমার মনে হয় না আইপিএলের জন্য কোনও সমস্যা হবে।

• বাংলাদেশ দলে কারা পার্থক্য গড়ে দিতে পারেন?

হাবিবুল: সাকিব অভিজ্ঞ প্লেয়ার। চোটের জন্য শেষ সিরিজে ওঁকে আমরা পাইনি। ও ফিরলে দল শক্তিশালী হবে। তার সঙ্গে তামিম ইকবাল, মুশফিকুরের মতো সিনিয়ররা সব সময়ই পার্থক্য গড়ে দিতে পারেন। আর যদি নতুনদের কথা বলো, তা হলে সেটা লিটন দাস। যে দিনটা ওর হয় সে দিন অন্য রকম কিছু একটা হয়ে যায়। ও একাই পার্থক্য গড়ে দিতে পারে। মুস্তাফিজুর রহমানও তো রয়েছে।

• সবাই ভারতকে ফেভারিট বলছে। টানা দু’বছরের পারফরম্যান্সের নিরিখে। কিন্তু বিশ্বকাপ একটা আলাদা মঞ্চ। আপনার কী মনে হয়, পারবে ভারত?

হাবিবুল: ভারত এমন একটা টিম যেখানে সবাই ভাল প্লেয়ার। এটা সচরাচর পাওয়া যায় না। একটা দলে সবাই ভাল প্লেয়ার হওয়াটা ভারতকে অনেকটাই এগিয়ে দিচ্ছে। তার মধ্যে ভারতের পেস বোলিংও খুব উন্নতি করেছে। ব্যাটিং তো বিশ্বসেরা। ২০০৩ আর ২০০৭-এ যেমন ছিল অস্ট্রেলিয়া দল। তবে বড় মঞ্চে অনেক বড় প্লেয়ারই ফর্ম হারিয়ে ফেলেন। তেমন না হলে ভারত খুবই ভাল দল। কিছুটা ভাগ্যেরও ব্যাপার।

• বিরাট কোহলিকে কোথায় দেখছেন বিশ্বকাপে?

হাবিবুল: বিরাট কোহলি বড় মঞ্চের প্লেয়ার। ও ম্যাচ উইনার। ও সব সময়ই আলাদা কিছু করে দিতে পারে।

• অস্ট্রেলিয়া কি ডেভিড ওয়ার্নার আর স্টিভ স্মিথকে ফিরিয়ে আবার বিশ্বকাপের দাবিদার হয়ে উঠল?

হাবিবুল: ভারতের মাটিতে শেষ সিরিজের পর কিন্তু আর এটা বলা যাবে না, এই দু’জন ফেরায় অস্ট্রেলিয়া শক্তিশালী দল হয়ে উঠেছে। ছ’মাস আগে বললেও আমার উত্তরটা অন্য রকম হত। তবে এটা ঠিক ওয়ার্নার আর স্মিথ ফেরায় অস্ট্রেলিয়ার ব্যাটিং আরও শক্তিশালী হবে।

• বিশ্বকাপের সেরা তিনটি দল যদি বাছতে বলা হয়, তা হলে কাদের এগিয়ে রাখবে?

হাবিবুল: সেরা তিন অবশ্যই ইংল্যান্ড, অস্ট্রেলিয়া ও ভারত। তিনটি দলই ফর্মের শীর্ষে রয়েছে।

• ভারত-পাকিস্তান ম্যাচ নিয়ে যে দোদুল্যমান পরিস্থিতি তৈরি হয়েছে সেটা কতটা ওই ম্যাচের উপর প্রভাব ফেলবে?

হাবিবুল: আমার মনে হয় সবাই পেশাদার এবং বিশ্বকাপের আসরে সবাই ম্যাচ জিততে চাইবে। এ বার যা ফরম্যাট তাতে একটা ম্যাচ অনেকটা পার্থক্য গড়ে দিতে পারে। আমরা অনেক ভাল ক্রিকেট দেখতে পাব এই ম্যাচে আশা করছি।

খেলোয়াড় জীবন এবং নির্বাচক জীবন মিলে আপনার সেরা বিশ্বকাপ কোনটা?

হাবিবুল: ২০০৭ বিশ্বকাপটা বাংলাদেশের ক্রিকেটে জোয়ার এনেছিল। তার পর থেকেই বাংলাদেশে ক্রিকেটের ক্রেজ অনেক বেড়ে যায়। সবাই ক্রিকেট খেলতে আগ্রহী হয়। ২০১৫-র বিশ্বকাপটাও কিন্তু আমরা খারাপ খেলিনি। কোয়ার্টার ফাইনালে পৌঁছেছিলাম। তবে এ বার কিন্তু আমাদের সেরা বিশ্বকাপ হতে চলেছে। এটাই আমাদের সেরা দল। অনেক অভিজ্ঞ ক্রিকেটার রয়েছে। যাদের হয়তো আর পরের বার পাব না। পরের বার অনেকটাই নতুন দল নিয়ে নামতে হবে।

• খেলোয়াড় জীবনে আপনার অধিনায়কত্বে ২০০৭ বিশ্বকাপ ঠিক কতটা আজও বাংলাদেশ ক্রিকেটকে অনুপ্রাণিত করে?

হাবিবুল: আগেই বললাম, ওই বিশ্বকাপটা বাংলাদেশ ক্রিকেটকে বিশ্বের দরবারে চিনিয়েছিল। বিশেষ করে, ভারতের মতো দলকে হারিয়ে দেওয়াটা সহজ ছিল না। তোমার হয়তো মনে আছে, ওই বিশ্বকাপে বাংলাদেশের কাছে হেরে লিগ পর্ব থেকেই ছিটকে গিয়েছিল ভারত। আমরা হয়তো আরও ভাল করতে পারতাম। কিন্তু সেই বিশ্বকাপই আমাদের ক্রিকেট বিশ্বে মাথা তুলে চলার রাস্তা দেখিয়েছিল।

• বিশ্বকাপ নিয়ে বাংলাদেশে সাধারণ মানুষের মধ্যে উত্তেজনা কোথায় পৌঁছেছে?

হাবিবুল: সেটা সত্যিই বলার মতো। মানে, মানুষ বিশ্বকাপের মধ্যেই বাঁচতে শুরু করে দিয়েছে। গত কাল দল ঘোষণা হয়েছে। লোকের মুখে তা ছাড়া আর কোনও আলোচনা নেই। বিশ্বকাপের দু’মাস হয়তো গোটা দেশ নাওয়া-খাওয়া ভুলে শুধু বিশ্বকাপ নিয়েই বাঁচবে।

• আপনাদের এক দিন আগেই বিশ্বকাপ দল ঘোষণা করেছে ভারত। সেখানে প্রশ্ন উঠছে দীনেশ কার্তিককে দলে নেওয়া নিয়ে, আপনার কী মনে হয়?

হাবিবুল: আমি দল নির্বাচন করি, তাই জানি কত কিছু মাথায় রাখতে হয়। আমার মনে হয় না দীনেশ কার্তিককে দলে রাখাটা ভুল সিদ্ধান্ত। কারণ, বিশ্বকাপের মতো মঞ্চে অনেক চাপ থাকে। সেটা অভিজ্ঞতা দিয়েই সামলাতে হয়। আর দীনেশ কার্তিক ঠান্ডা মাথায় ম্যাচ বের করে নিয়ে যেতে পারে। তার প্রমাণ আমরা পেয়েছি নিদাহাস ট্রফিতে। আমাদের জেতা ম্যাচ ছিনিয়ে নিয়েছিল।

• এ বার বিশ্বকাপের ফরম্যাট বদলে গিয়েছে। কোনও গ্রুপ নেই, সবাইকে সবার সঙ্গে খেলতে হবে। সেরা চার দল সেমিফাইনালে যাবে। আপনার কী মনে হয়?

হাবিবুল: এটার দুটো দিক আছে। ভালও আছে, মন্দও আছে। যেমন, সবার সঙ্গে খেলে তবেই সেমিফাইনালে যেতে হবে। তেমনই একটা ম্যাচ খারাপ খেললে আরও একটা ম্যাচ থাকবে ঘুরে দাঁড়ানোর। যেহেতু সবাই সবার সঙ্গে খেলবে, তাতে সময়টাও পাওয়া যাবে রিকভারির।

Related Articles

Leave a reply

Please enter your comment!
Please enter your name here

Stay Connected

0FansLike
3,913FollowersFollow
0SubscribersSubscribe
- Advertisement -spot_img

Latest Articles