আট মাস পর আফগান নারী ফুটবলারদের বিশাল এক বিজয় অর্জিত হলো। অস্ট্রেলিয়ার মাটিতে আফগানিস্তানের জার্সি গায়ে খেলতে নামলেন তারা।
তালেবানদের ক্ষমতায় আসার পর আফগানিস্তানে নারীদের খেলাধুলার ভবিষ্যৎ পুরোপুরি অন্ধকারে চলে যায়। সে সময় দেশ থেকে পালিয়ে যাওয়া নারী ফুটবলাররা এক হয়ে আবার খেলতে নামতে পারবে, সেটাই ছিল দুঃস্বপ্নের মত। কিন্তু, যেভাবেই হোক আফগানিস্তানের সেই নারী ফুটবলাররা আবারও প্রতিযোগিতামূলক কোনো ম্যাচে খেলতে নামতে পারলো।
আরও পড়ুনঃ প্রিমিয়ার লিগ চ্যাম্পিয়ন শেখ জামাল
মেলবোর্ন থেকে পশ্চিমে প্রায় আধঘণ্টার রাস্তা পার হলে ডেলাহি রিজার্ভ। সেখানকার একটি ছোট্ট মাঠে নির্বাসিত আফগান নারী ফুটবল দল প্রথম প্রতিযোগিতামূলক ম্যাচে খেলতে নেমেছে ভিক্টোরিয়ার ২০২২ স্টেট লিগ-৪ এর ক্যাম্পেইনে। তবে, ৯০ মিনিটের খেলায় ইটিএ বাফেলোর বিপক্ষে কোনো গোল করতে পারেনি আফগান নারী ফুটবল দলটি।
মুরফাল নামে এক আফগান নারী ফুটবলার ইএসপিএনকে বলেন, ‘আমি খুব ভালো অনুভব করছি। আমরা আবারও একসঙ্গে, একটি দল হয়ে খেলতে নামতে পেরেছি। এটাই আমাদের সেরা অংশ। আমরা একে অপরকে আবার পেয়েছি এবং একসঙ্গে হতে পেরেছি। এটা আমাদের সবার জন্যই ভালো একটি দিক।’
ম্যাচে তো কোনো ফল হলো না। এ নিয়ে মুরফাল বলেন, ‘রেজাল্ট কোনো গুরুত্বপূর্ণ বিষয় নয়। কারণ, এই ম্যাচের মধ্য দিয়ে আমরা একে অপরকে আবার ফিরে পেয়েছি। এটা আমাদের জন্য খুবই সুখের একটি সময়।’
আরও পড়ুনঃ রোনালদোকে বাদ দেওয়া যাবে না বললেন কিংবদন্তি
মুরফাল এবং তার সতীর্থদের এই পর্যায়ে আসাটা খুব একটা সহজ ছিল না। গত বছর আগস্টে যখন তালেবানরা আফগানিস্তানের ক্ষমতা দখল করে নেয়, তখন শতাধিক নারী ক্রীড়াবীদ দেশটি থেকে পালিয়ে যায়।
নারী ক্রীড়াবীদ হওয়ার কারণে তালেবানদের আমলে নিজেদের জীবন হুমকির মুখে হওয়ার শঙ্কা থেকেই তারা দেশ থেকে পালিয়ে যাওয়ার সিদ্ধান্ত নেয়। শুধু তালেবানরাই তাদের জন্য হুমকি তেমনটা নয়, তালেবানদের বিপদে ফেলার জন্য প্রতিপক্ষ গ্রুপগুলোও তাদের ওপর হামলা করতে পারে, এমন সম্ভাবনা থেকেই আফগান নারী ক্রীড়াবীদরা পালিয়ে যায়।
শেষ পর্যন্ত আফগান নারী ফুটবলারদের ঠাঁই হয় অস্ট্রেলিয়ায়। যদিও সেখান থেকে তাদের সরিয়ে নেয়ার চেষ্টা করা হয়েছিল। তবে অস্ট্রেলিয়ায় নিজেদের বসবাস নিশ্চিত হওয়ার পর সাবেক অধিনায়ক খালিদা পোপাল সিদ্ধান্ত নেন, যত ঝড়-ঝঞ্চাই আসুক না কেন, তারা একসঙ্গে একটি দল হিসেবে থাকবেন।
আরও পড়ুনঃ আর্জেন্টিনার বিপক্ষে ম্যাচ দিয়েই ক্যারিয়ারের ইতি টানবেন কিয়েল্লেনি
এ সিদ্ধান্তের পর আফগান নারী ফুটবলাররা এখন আশা করছে, তারা ফিফার কাছে একটি আবেদন জমা দেবে। ন্যাশনাল ফেডারেশন এবং সরকারের পক্ষ থেকে যেন তাদেরকে আফগানিস্তানের জাতীয় নারী ফুটবল দল হিসেবে স্বীকৃতি দেয়া হয়। তারা যেন আফগানিস্তানের হয়ে বিশ্বের যে কোনো টুর্নামেন্টে অংশ নিতে পারে।
আন্তর্জাতিক ফুটবলে তাদের এই স্বীকৃতির প্রক্রিয়া কী, তারা কী আদৌ আফগানিস্তানের পতাকা নিয়ে খেলতে পারবে কি না, তা নিশ্চিত নয়। তবে, মেলবোর্ন ভিক্টোরি এফসি এডব্লিউটি – ‘এ’ লিগের একটি ক্লাব যারা আফগান নারী দলটির জন্য পুরোপুরি অপারেশনাল, অ্যাডমিনেস্ট্রেটিভ এবং কোচিং সাপোর্ট- সব দিয়ে যাচ্ছে। রোববারের ম্যাচ দিয়ে তারা শুধু নিজেদের আত্মপ্রকাশই করলো না, দেখিয়ে দিলো একটি জাতীয় দল হওয়ার জন্য যথেষ্ট পরিমাণে ফুটবলারও তাদের রয়েছে।
মেলর্বোর্ন ভিক্টোরি ক্লাবের ফুটবল ডিরেক্টর জন ডিডুলিকা ইএসপিএনকে বলেন, ‘এটা সব সময় ভাবা হয় যে, কিভাবে একটি অর্গানাইজেশন কম লোকবল নিয়ে এভাবে কার্যক্রম পরিচালনা করে? কিন্তু আমাদের জন্য রোববার (২৪ এপ্রিল) ছিল একটি সুখের দিন। তাদেরকে এ ধরনের হৃদয়, কমিটমেন্ট নিয়ে খেলতে দেখার পর সত্যিই খুব ভালো লাগছে। এটাই অনেক সুন্দর।’
বিডি স্পোর্টস নিউজ/এনসি