গত শনিবার (১৯ অক্টোবর) চীনের সাংহাইয়ে অনুষ্ঠিত হয়ে গেলো ১৫তম বিশ্ব মার্শাল আর্ট চ্যাম্পিয়নশিপের ওপেনিং অনুষ্ঠান। বাংলাদেশের জন্য গর্ব ও আনন্দের বিষয় হলো, সে অনুষ্ঠানে বাংলাদেশের সেলিম খান সহ মাত্র তিন জন বিদেশী মার্শাল আর্ট পারফর্মার অংশগ্রহণ করেছেন। আর বাকিরা সকলেই ছিলেন চীনের নাগরিক।
হাজার হাজার দর্শক, দেশ বিদেশ থেকে আসা ক্রিয়াবিদ এবং মার্শাল আর্ট এক্সপার্টদের সামনে বাংলাদেশের মানচিত্র এবং জাতীয় পতাকা সম্বলিত জার্সি পরিহিত সেলিম খান অতি গর্বের সাথে বলেন “আমি সেলিম খান। আমি একজন বাঙালি। গত ৬ বছর ধরে আমি মার্শাল আর্ট চর্চা করছি।”
বিডিস্পোর্টসনিউজকে সেলিম খান বলেন, “এত বড় অনুষ্ঠানে নিজের দেশকে সবার সামনে উপস্থাপন করা সত্যিই একটি গর্বের বিষয়।” পুরো অনুষ্ঠানে তাঁর উপস্থিতি ছিল একটু আলাদা। সবাই মার্শাল আর্টের ড্রেস পরলেও তিনি পরেছিলেন বাংলাদেশের মানচিত্র এবং জাতীয় পতাকা সম্বলিত জার্সি, যা সহজেই সবার দৃষ্টি আকর্ষণ করে। অনুষ্ঠানে আসা দেশ বিদেশের সম্মানিত ক্রীড়াবিদদের সাথে আরো উপস্থিত ছিলেন বিখ্যাত চাইনিজ ও হলিউড মুভি ষ্টার জেট লি এবং অন্যান্য মার্শাল আর্ট তারকা অভিনেতারা।
প্রতি দুই বছর পর পর এই চ্যাম্পিয়নশিপ আয়োজন করা হয়। মার্শাল আর্টের জন্ম চায়নাতে হলেও প্রতি বছর তারা চ্যাম্পিয়নশিপ আয়োজনের অনুমতি পায়না। পূর্বে চীন মাত্র দুইবার মার্শাল আর্টের সর্বোচ্চ সম্মানিত এই প্রতিযোগিতা আয়োজনের অনুমতি পেয়েছিল। ১৯৯১ এবং ২০০৭ সালের পর দীর্ঘ এক যুগের ব্যাবধানে তৃতীয়বারের মতো ২০১৯ সালে এই চ্যাম্পিয়নশিপ আবারো আয়োজনের সুযোগ পায় চীন।
ব্যাপক উদ্দিপনার মধ্য দিয়ে জাকজমকপূর্ণভাবে এবং সর্বোচ্চ প্রযুক্তি ব্যবহার করে অনুষ্ঠানটি আয়োজন করে তারা। ২০১৯ এর এই উদ্বোধনীই ছিল মার্শাল আর্ট চ্যাম্পিয়নশিপের ইতিহাসে সবচেয়ে চোখ ধাঁধানো এবং জাকজমকপূর্ণ উদ্বোধনী অনুষ্ঠান। এধরনের গুরুত্বপূর্ণ উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে বাংলাদেশের জার্সি পরিহিত সেলিম খানের উপস্থিতি বাংলাদেশের জন্য সত্যিই অনেক গর্বের।
উদ্বোধনী অনুষ্ঠানের ভিডিও লিংক: https://www.facebook.com/salim.khan.32/videos/2536734703039011/
সেলিম খান
সেলিম খান ১৯৯১ সালে বাংলাদেশের রংপুর জেলার মিঠাপুকুর থানায় জন্মগ্রহণ করেন। ছাত্র জীবনে ছিলেন তুখোড় মেধাবী। ২০১২ সালে চীনের শেনইয়াং ইউনিভার্সিটি অব কেমিক্যাল টেকনোলজি থেকে সফটওয়্যার ইঞ্জিনিয়ারিং এ ব্যাচেলর শেষ করেন তিনি। দেশে ফিরে ইউনিভার্সিটি অব ডেভলপমেন্ট অল্টারনেটিভে (ইউডা) কিছুদিন লেকচারার হিসেবে ছিলেন। এরপর আবার পাড়ি জমান চীনের সাংহাই নগরে। সেখানে তিনি ৫-৬ বছর বেশ কয়েকটি নামকরা প্রতিষ্ঠানের গুরুত্বপূর্ণ পদে কর্মরত ছিলেন। এরপর সাংহাই শহরে নিজেই একটি বিজনেস কনসাল্টিং কোম্পানি চালু করেন।
চীনে বসবাসরত বাংলাদেশিরা সেলিম খানকে একজন হেল্পফুল ও ভালমনের বিশ্বস্ত মানুষ হিসেবে চেনেন। শত ব্যাস্ততার মাঝেও চীনে বসবাসরত বাংলাদেশিদের অনেক সাহায্য সহযোগিতা করে থাকেন তিনি। বিশেষ করে চাকরির ব্যাপারে অনেককেই তার সাহায্য করার কথা শোনা যায়।
লেখাপড়ার পাশাপাশি ছোট বেলা থেকেই ফাইটিংয়ের ব্যাপারে আগ্রহী ছিলেন তিনি। চীনে শেনইয়াং ইউনিভার্সিটিতে ব্যাচেলরের ছাত্র থাকা অবস্থায় চাইনিজ মার্শাল আর্ট ট্রেনিং স্কুল থেকে বেসিক ট্রেনিং নেন সেলিম। এরপর শুরু হয় চাকুরী জীবন। চাকুরী জীবনের শত ব্যাস্ততার মাঝেও সময় বের করে মার্শাল আর্ট শেখেন তিনি। সাংহাইতেও কিছু মার্শাল আর্ট ট্রেনিং সেন্টার থেকে ট্রেনিং নেন।
কিন্তু মার্শাল আর্ট পিপাসুক হৃদয় তাতে সন্তুষ্ট হয়না। নিজের কোম্পানি পরিচালনার পাশাপাশি তিনি সাংহাই ইউনিভার্সিটি অব স্পোর্ট-এ (বিশ্বের অন্যতম সেরা স্পোর্টস ইউনিভার্সিটি) মার্শাল আর্ট প্রদর্শনী এবং ফাইটিং কোরিওগ্রাফিতে মাস্টার্স শুরু করেন। (১৫তম ওয়ার্ল্ড মার্শাল আর্ট চ্যাম্পিয়নশিপের ওপেনিং অনুষ্ঠান প্রদর্শনীর এবং কোরিওগ্রাফির দায়িত্বে ছিলেন ইউনিভার্সিটি অব স্পোর্ট এর প্রফেসর মিস্টার ওয়াং সান। আর প্রফেসর ওয়াং সানের অ্যাসিস্ট্যান্ট হিসেবে চ্যাম্পিয়নশিপের ওপেনিং অনুষ্ঠানে মার্শাল আর্ট প্রদর্শনী এবং কোরিওগ্রাফির কাজ করার অভিজ্ঞতা লাভ করেন সেলিম খান।)
বাংলাদেশের মার্শাল আর্ট নিয়ে অনেক আশাবাদী সেলিম খান। ভবিষ্যতে বাংলাদেশের মার্শাল আর্টের ডেভলপমেন্ট নিয়ে কাজ করতে চান তিনি। মাস্টার্স শেষ করার পর ইচ্ছা আছে শাওলিন টেম্পল থেকে ট্রেনিং নেওয়ার। প্রসঙ্গত, হাজার বছর আগে শাওলিন টেম্পলেই চাইনিজ মার্শাল আর্টের জন্ম হয়েছিল। মার্শাল আর্টের সকল স্টুডেন্টেরই স্বপ্ন থাকে শাওলিন টেম্পল থেকে ট্রেনিং নেওয়া।
আমরা আশাবাদী, সেলিম খান ভবিষ্যতে মার্শাল আর্ট নিয়ে বাংলাদেশের জন্য ভালো কিছু করে বিশ্ব দরবারে বাংলাদেশকে গর্বিত করবেন।