বাংলাদেশ ক্রিকেট বোর্ডের কাছে ক্রিকেটারদের দাবিদাওয়া পেশ করার পর পাঁচ দিন অতিবাহিত হয়ে গেছে। দাবিদাওয়া পূরণ হওয়ার পর ক্রিকেটারদের যতটা উৎফুল্ল মনে হয়েছিল এখন ততটা দেখা যাচ্ছেনা। মনে হচ্ছে বোর্ড ও ক্রিকেটারদের সম্পর্ক উপরে যতটাই মিঠা ভেতরে ততটাই তিতার দিকে এগুচ্ছে। বিশেষ করে বিসিবি সভাপতির ভাষ্য অনুযায়ী তেমনটাই আচঁ করা যাচ্ছে।
ধর্মঘটের পর থেকে জাতীয় দলের অনুশীলনে তিনদিনের মধ্যে দুদিনই অনুপস্থিত সাকিব আল হাসান। এমনকি খেলেননি প্রস্তুতি ম্যাচেও। ‘অন্য খেলোয়াড়দের সুযোগ করে দেয়ার জন্য’ প্রস্তুতি ম্যাচে খেলছেননা এমনটাই ম্যাসেজ পাঠিয়েছেন কোচ ডমিঙ্গকে তবে ম্যাচে খেলোয়াড়দের তালিকায় তার নাম ছিল।
তবে আজ বাংলাদেশের জাতীয় দৈনিক ‘প্রথম আলো’র সাথে পাপনের দেয়া এক সাক্ষাৎকার থেকে জানা যাচ্ছে সাকিবের সাথে বোর্ডের সমস্যা ভিন্ন জায়গায়। এমনকি বিসিবি সভাপতি নাজমুল হাসান পাপন তো শঙ্কাই প্রকাশ করেছেন যে, ‘সাকিব আল হাসান তো ভারত সফরেও না যাওয়ার সিদ্ধান্ত নিতে পারে।’ আর সন্তান সম্ভবা স্ত্রীর পাশে থাকতে ভারত সফরে যাচ্ছেননা তামিম ইকবাল।
সাক্ষাৎকারে পাপন বলেন, ‘এখন সফরে যাওয়ার আগ মুহূর্তে যদি শুনি আর কেউ যাবে না, তাহলে কেমন লাগবে? আমার তো বদ্ধমূল ধারণা যাবে না এবং এমন এক সময় বলবে, যখন আমাদের কিছু করার থাকবে না।’
বিসিবি সভাপতি বলেন, ‘সাকিবকে ডেকেছি। দেখি ও কী বলে। আরও অনেকে হতে পারে। আমি জানি না কারা। তবে তথ্য ছিল ওরা যাবে না।’
যদি শেষ মুহূর্তে ভারত সফরে অনেকেই না যেতে চায় তাহলে বিসিবি সভাপতি কি করবেন? এমন প্রশ্নের জবাবে অসহায়ত্ব প্রকাশ করে তিনি বলেন, ‘এখন তো ঘুরে গেছে পরিস্থিতি। ওরা হয়তো ভাবেনি, এত তাড়াতাড়ি সব শেষ হয়ে যাবে। আমি কোনো বিশ্বস্ত সূত্র থেকে শুনে বলছি না। তবু ৩০ তারিখ যদি ওরা বলে যাবে না, তখন কী করব? তখন তো পুরো কম্বিনেশন বদলাতে হবে। আমি তখন অধিনায়ক কোথায় পাব! এদের নিয়ে আমি কী করব বলেন?’
এখনো নিজের আগের সিদ্ধান্তে অবিচল থেকে বিসিবি সভাপতি দাবি করেন, ভারত সফরকে বানচাল করার উদ্দেশ্যেই ধর্মঘট ডাকা হয়েছিল। তিনি বলেন, ‘ভারত সফরের এখনো আপনারা কিছুই দেখেননি। দেখেন না কী হয়। আমি যখন বলেছি, এটার মধ্যে একটা ষড়যন্ত্র আছে…। আপনারা আমাকে এত বছর ধরে চেনেন, কখনো ভুল বা মিথ্যা বলেছি? এ রকম কথা যদি আমি বলে থাকি, নিশ্চয়ই এটার মধ্যে কিছু একটা আছে। আমার কাছে তথ্য ছিল যে ভারত সিরিজ বানচাল হবে।’
তামিম ইকবালের নাম উল্লেখ করে বিসিবি সভাপতি বলেন জাতীয় দলের অনেক ক্রিকেটারই খেলতে চায় না। পাপন বলেন, ‘আমরা খেলোয়াড়দের দাবিদাওয়া মেনে নেওয়ায় প্রথম শ্রেণির ক্রিকেটাররা খুশি হয়েছে জানি। কারণ, খেলা হবে, ওরা তো খেলতে চায়। কিন্তু এটা কি ওখানে যারা ছিল, সবাই চায়? তামিম আমাকে প্রথমে বলেছিল ও ভারতের শেষ টেস্টটা খেলতে চাইছে না, কারণ ওই সময় ওর বাচ্চার ডেলিভারি। খেলোয়াড়দের সঙ্গে মিটিং শেষ হওয়ার সঙ্গে সঙ্গে তামিম আমার রুমে গিয়ে বলল, ‘আমি যাব (ভারতে) না।’ আমি বললাম, ‘মানে কি, তোমার সঙ্গে তো কথা হলো শেষেরটায় থাকবে না। তাহলে এখন যাবা না কেন?’ ও তবু বলল, ও যাবে না।’
সাকিব আল হাসানের গ্রামীণফোনের সঙ্গে বিজ্ঞাপন চুক্তির বিষয়ে বলতে যেয়ে বিসিবি সভাপতি বলেন, ‘খেলোয়াড়দের আমরা বলেছিলাম, ওরা কোনো টেলকোর সঙ্গে চুক্তি করতে পারবে না। যেন সামনের বছর টেলকোগুলো টিম স্পন্সরের দরপত্রে অংশগ্রহণ করে। তবু জেনেশুনে কি সাকিব এই বেআইনি কাজটা করতে পারে? আমি কি যা খুশি তা-ই করতে দেব ওদের? সময়টাও দেখুন! জানুয়ারিতে আমি নতুন স্পন্সরের দরপত্রে টেলকোকে আর পাব না। বা এলেও ওরা কম টাকা দিতে চাইবে। এভাবে যে আমাদের ফাঁদে ফেলল, এতে ক্ষতিটা কার? এতে শুধু একজন খেলোয়াড় লাভবান হলো, কিন্তু আমার ক্রিকেট দলের কী হবে?’
বোর্ড কি সাকিবকে চুক্তি প্রত্যাহার করতে বলবে না? এ প্রশ্নের জবাবে পাপন বলেন, ‘ওকে আত্মপক্ষ সমর্থনের সুযোগ দেওয়া হয়েছে। ওর কোনো ব্যাখ্যা থাকলে সেটা আগে শুনি।’