10.7 C
New York
Saturday, April 20, 2024

Buy now

মনে প্রাণে কিছু চাইলে আপনি তা পাবেনই: গাঙ্গুলী

ভারতীয় ক্রিকেট বোর্ডে (বিসিসিআই) বড় ধরনের পরিবর্তন আসতে যাচ্ছে কারণ সাবেক অধিনায়ক সৌরভ গাঙ্গুলী বিসিসিআইয়ের নতুন প্রেসিডেন্ট হচ্ছেন। অফিসিয়াল ঘোষণা না এলেও ভারতীয় গণমাধ্যমগুলোর মতে এই পদে আর কোনো প্রতিদ্বন্দ্বী না থাকায় সৌরভ হবেন নির্বাচন ছাড়াই প্রেসিডেন্ট।

রবিবার বিসিসিআইয়ের অনানুষ্ঠানিক এক সভায় ক্রিকেট বোর্ডের কর্মকর্তারা সৌরভকে বোর্ড প্রেসিডেন্ট করার বিষয়টি নিশ্চিত করেন।আগামী ২৩ অক্টোবর বিসিসিআইয়ের প্রেসিডেন্ট পদে বসবেন সৌরভ।

কলকাতার শীর্ষস্থানীয় একটি পত্রিকা সৌরভের বোর্ড প্রেসিডেন্ট হওয়ার বিষয়টি নিশ্চিত হওয়ার পর তার সাক্ষাৎকার নেয়। সেখানে গাঙ্গুলী সমসাময়িক বিষয় ও ক্রিকেট নিয়ে নিজের ভবিষ্যত পরিকল্পনা সম্পর্কে কিছু কথা বলেন। বিডিস্পোর্টসনিউজের পাঠকদের জন্য সাক্ষাৎকারের চুম্বক অংশটুকু তুলে ধরা হলো।

প্রশ্ন: একই দিনে একজন বাঙালি নোবেল জিতেছেন (অর্থনীতিবিদ অভিজিৎ বিনায়ক বন্দ্যোপাধ্যায়)। আর একজন ক্রিকেট বোর্ড প্রেসিডেন্ট হলেন?
সৌরভ: ঝামেলায় ফেলে দিলেন। উত্তর দেওয়াটা খুব কঠিন হয়ে গেল। তবে নোবেল জেতাটা অনেক বড় ব্যাপার। বিশাল সম্মান। এর পাশে পৃথিবীতে আর কোনো পুরস্কারই লাগে না। ক্রিকেট বোর্ডের প্রধান হওয়াটাও না।

প্রশ্ন: মনে করুন বোর্ড প্রেসিডেন্ট আপনি হননি। হয়েছেন আপনার বন্ধু শচীন টেন্ডুলকার। তাও দশ মাসের জন্য। সেই দশ মাসে শচীনের কাছে আপনার কী কী চাওয়া থাকবে?
সৌরভ: প্রথম চাওয়া থাকত প্রথম শ্রেণির ক্রিকেটকে রক্ষা করা। তাদের পারিশ্রমিক হয়তো বাড়িয়েছে, তবে সেটা যথেষ্ট নয় ও তাদের অবস্থার খুব উন্নতি হয়েছে কিনা আমি বলতে পারবো না। আমাদের এখনও আন্তর্জাতিক ক্রিকেট থেকে প্রথম শ্রেণির ক্রিকেটে অনেক ব্যবধান রয়েছে। আমি চাইতাম শচীন এগুলো ব্যালেন্স করবে। দুই, টেস্ট ক্রিকেটকে আরও ইন্টারেস্টিং করতে হবে। খালি মাঠে টেস্ট ক্রিকেট হওয়াটা অসহ্য ব্যাপার।

প্রশ্ন: আপনি কলকাতায় নাইট ক্রিকেট চালু করেছিলেন। দেশে কি নাইট টেস্ট চালু করবেন? কেননা ভারত এখনও নাইট টেস্ট খেলতে রাজি হয়নি?
সৌরভ: টেস্ট ক্রিকেটের আমেজ ফিরিয়ে আনতে যা যা দরকার করবো।

প্রশ্ন: আপনি করবেন নাকি শচীনের কাছে চাইবেন?
সৌরভ: আইসিসিতে ভারতের পজিশন বেটার করার চেষ্টা করবো। এ মুহূর্তে আমাদের অবস্থা খুবই খারাপ। তিন-চার বছর ধরে পরিস্থিতি খারাপ হচ্ছে। অথচ আমরা হলাম বিশ্ব ক্রিকেটে বাণিজ্যে সবচেয়ে শক্তিশালী দেশ। এটাকে ঠিক করতেই হবে।

প্রশ্ন: ভারতীয় টিম গত সাত বছর আইসিসির কোনো নকআউট টুর্নামেন্ট জেতেনি। হয় সেমিফাইনাল না হলে ফাইনালে হেরেছে।
সৌরভ: হ্যাঁ, বের করতে হবে সেমিফাইনাল বা ফাইনালে থেকে আমরা ট্রফি জিততে পারছি না কেন? সেখান থেকেই ট্রফি জেতার রাস্তা খুঁজতে হবে।

প্রশ্ন: সাধারণভাবে মনে করা হচ্ছিল বোর্ড প্রেসিডেন্ট হিসেবে আপনার কর্মজীবন হবে অমিতাভ বচ্চনের ছবির সেকেন্ড হাফ। আপনি যেমন ক্রিকেট ক্যারিয়ারে প্রশাসকদের অত্যাচার সহ্য করেছেন। ঠিক যেমনটা বচ্চন তার ছবিতে প্রথম ধাপে মার খেলে দ্বিতীয় ধাপে প্রতিশোধ নিত। বোর্ড প্রেসিডেন্ট হিসেবে আপনার প্রতিহিংসা মেটানোর দুয়ার কি খুলে গেল?
সৌরভ: একেবারেই না। একটা কথা মনে রাখবেন আমি ১০০ টেস্ট ও ৩০০ ওয়ানডে খেলা ক্রিকেটার। এমন কৃতিত্ব ভারতে মাত্র তিনজনের আছে। এর সঙ্গে যোগ করুন দু’শর ওপর ম্যাচে আমি দেশকে নের্তৃত্ব দিয়েছি। হ্যাঁ, আমার চলার পথে অনেক খানাখন্দ ছিল ঠিকই। কিন্তু সেগুলো আমাকে তেতো করে দিতে পারেনি। ক্রিকেটার হিসেবে আমার অর্জন কেড়ে নিতে পারেনি। আমি খুশির সঙ্গেই এই অর্জনগুলো নিয়ে অবসরে যেতে পেরেছি। প্রতিহিংসার ব্যাপারটা আমার ক্ষেত্রে প্রযোজ্য নয়।

প্রশ্ন: অনেকে বলছেন নির্বাচকদের বেতন দ্রুতই বাড়ানো উচিৎ। টাকা না বাড়ালে বড় বড় নামকে আপনি নির্বাচক প্যানেলে আনতে পারবেন না। তারা টিভি ছেড়ে, অন্য কাজ ছেড়ে আসবেন কেন? আপনি পাবেন ক্রিকেটার হিসেবে কার্যত ব্যর্থদের।
সৌরভ: হয়তো সত্যি কথা। তবে আমার মনে হয় সবার আগে এই স্বার্থের সংঘাত ব্যাপারটা নতুনভাবে দেখা উচিৎ। একটা লোক আইপিএলে কোচ হয়েছে বলে সে কমেন্ট্রি করতে পারবে না, এটা কী ধরনের কথা। আমার তো মনে হয় এই আইনটা মানুষের স্কিলকেই অস্বীকার করে। কারও মধ্যে যদি একাধিক স্কিল থাকে, সে যদি প্রতিভাবান হয় তবে তাকে নিয়মের বেড়াজালে থেমে যেতে হবে কেন?

প্রশ্ন: এটা মনে হচ্ছে আপনার হৃদয়ের খুব কাছের ব্যাপার এবং লড়বেন?
সৌরভ: অলরেডি তো কোর্টে মামলা চলছে। আজও শুনানি ছিল।

প্রশ্ন: কালকের রাতকে কিভাবে ব্যাখ্যা করবেন? আপনার জীবনের কোনো কোনো ম্যাচ হেরে গিয়েও জিতে যাওয়ার মতো নাটকীয়তা দেখছেন?
সৌরভ: এর চেয়েও বেশি নাটকীয়তা দেখেছি ইডেনে অস্ট্রেলিয়ার বিপক্ষে টেস্ট ম্যাচে। বিশাল ফলোঅনে পড়েও ম্যাচ জেতা। আসলে লাইভ ক্রিকেট ম্যাচের সঙ্গে কোনো কিছুর তুলনা চলে না। তবে এটা মানতেই হবে আমার জীবনের একটা বৃত্ত কাল রাতে পূর্ণ হলো। ভারতের অধিনায়ক থেকে বোর্ড প্রেসিডেন্ট। আজ পর্যন্ত এমন উদাহরণ নেই।

প্রশ্ন: পদে বসার পর রিঅ্যাকশন? আপনি কি জানেন গোটা ভারত ও ক্রিকেট বিশ্বজুড়ে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে তোলপাড় হয়ে যাচ্ছে?
সৌরভ: আমার কাল রাত থেকে যত হোয়াটসঅ্যাপ মেসেজ ঢুকেছে অবিশ্বাস্য। কম করেও সাড়ে পাঁচশ থেকে ছয়শ হবে। ভাবাই যায় না।

প্রশ্ন: নতুন জীবনে দিল্লি ক্যাপিটালস (হেড কোচ) তো চলে গেল?
সৌরভ: হ্যাঁ চলে গেল।

প্রশ্ন: কমেন্ট্রি চলে গেল?
সৌরভ: চলে গেল এখানকার মতো। বোর্ড প্রেসিডেন্ট থাকাকালীন ওটা করা বা কলাম লেখার সুযোগ নেই। এটা খুবই স্বাভাবিক।

প্রশ্ন: মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় (পশ্চিমবঙ্গের মুখ্যমন্ত্রী) আপনাকে অভিনন্দন জানিয়ে টুইট করেছেন, দেখেছেন?
সৌরভ: হ্যাঁ দেখেছি।

প্রশ্ন: সবকিছু শেষে কাল রাতে একা শুয়ে শুয়ে কী মনে হচ্ছিল?
সৌরভ: মনে হচ্ছিল কোনো কিছু যদি সত্যি মনপ্রাণ দিয়ে চান আর তার জন্য জীবন উজাড় করে দিতে রাজি থাকেন তাহলে সেই জিনিসটা আপনি পাবেন।

Related Articles

Leave a reply

Please enter your comment!
Please enter your name here

Stay Connected

0FansLike
3,913FollowersFollow
0SubscribersSubscribe
- Advertisement -spot_img

Latest Articles