নাটকীয়তায় ভরা বিশ্বকাপের শুরুটা ছিল মেজমেজে। তবে গ্রুপ পর্বে শ্রীলংকা-ইংল্যান্ড ম্যাচের সময় অপেক্ষাকৃত দুর্বল শ্রীলংকা যখন স্বাগতিক শক্তিশালী বিশ্বকাপের এক নম্বর দাবিদার ইংল্যান্ডকে হারিয়ে দিলো তখনি বিশ্বকাপের প্রকৃত ফ্লেভারটি পেতে শুরুকরে ক্রিকেট পাগল মানুষগুলো।
তবে নাটকীয়তারও তো একটা সীমা থাকে। কিন্তু বিশ্বকাপ ফাইনালে সে সীমাও অতিক্রম করে হলো এক সর্বকালের সর্বশ্রেষ্ঠ ফাইনাল। যেখানে নির্ধারিত ৫০ ওভারের খেলায় ম্যাচ ড্র হওয়ার পরে সুপার ওভারেও ড্র হয়েছে। কিন্তু নিউজিল্যান্ড না হেরেও চ্যাম্পিয়ন হয়েছে ইংল্যান্ড।
ইতিহাসের মাত্র তৃতীয় দল হয়ে টানা দুই বিশ্বকাপের ফাইনাল খেলেও শিরোপা জিততে পারল না নিউজিল্যান্ড। বাকি দুইটি দল হলো শ্রীলঙ্কা ও ইংল্যান্ড। যেখানে শ্রীলঙ্কা ২০০৭ ও ২০১১ বিশ্বকাপের ফাইনাল ও ইংল্যান্ড ১৯৮৭ ও ১৯৯২ বিশ্বকাপের ফাইনাল খেলেও শিরোপা জিততে পারেনি।
বলতে গেলে কয়েক ইঞ্চির জন্য শিরোপা হাতছাড়া হলো ব্ল্যাক ক্যাপসদের। শেষ বলে দুই রান প্রয়োজন, এক রান সম্পূর্ণ হয়েছে, দ্বিতীয় রান নেওয়ার জন্য প্রাণপণে ছুটছেন গাপটিল কিন্তু রয়ের থ্রো এর গতিতে বলের সাথে দৌড়ে জিততে পারেননি তিনি। স্টাম্প ভেঙেছেন বাটলার আর ঐ কয়েক ইঞ্চির জন্যই শিরোপাও ফসকে গেল নিউজিল্যান্ডের হাত থেকে।
নিউজিল্যান্ড আজকের ম্যাচে ইংল্যান্ডের কাছে হারেনি তারা আজ হেরেছে তাদের ভাগ্যের কাছে। ভাগ্য যেদিন পাশে থাকেনা সেদিন যেন কোনো কিছুতেই কাজ হয়না। যদি ভাগ্যের কাছে তারা নাই হারত তাহলে সুপার ওভারেও ড্র করে মাথা নিচু করে হার মেনে নিতে হত না।
নিউজিল্যান্ড চ্যাম্পিয়ন হতে পারত নির্ধারিত খেলার ৫০ তম ওভারেই। শেষ ওভারে প্রয়োজন ১৫ রান, বোলিংয়ে ট্রেন্ট বোল্ট আর স্ট্রাইকে ছিলেন বেন স্টোকস। প্রথম দুইটি বল ডট দিলেও পরের বলে ছয় মারেন স্টোকস। শেষ ৩ বলে প্রয়োজন দাঁড়ায় ৯ রান। একটু দুর্দান্ত ইয়র্কার ডেলিভারিতে কোনো রকমে ব্যাট লাগিয়ে দুই রান সম্পূর্ণ করবেন স্টোকস। রান আউট এড়াতে দিলেন ড্রাইভ, কিন্তু গাপটিল বলটি উইকেটকিপারের কাছে থ্রো করলেও ড্রাইভ দেওয়া স্টোকসের ব্যাটে লেগে অতিরিক্ত বাউন্ডারি হয়ে সেই বল থেকে আসলো ছয় রান। তখন ২ বলে প্রয়োজন মাত্র ৩ রান। নিঃসন্দেহে চাপে পড়ে যায় নিউজিল্যান্ড। তবুও তারা চাপ সরিয়ে ম্যাচ জয়ে আশাবাদী। ঠিক তখনি পঞ্চম বলে স্টোকস মিড অফে বল ঠেলে দিলে স্যান্টনারের করা থ্রো তে রান আউট হন আদিল রশিদ। এর মধ্যে এক রান সম্পূর্ণ করে আবার স্ট্রাইকে ফিরেছেন স্টোকস। শেষ বলে প্রয়োজন দুই রান। বোল্ট শেষ বলটি লো ফুলটস করলে মিড অনে ঠেলে দিয়ে দুই রান নেওয়ার চেষ্টা করলেও এবারো এক রান সম্পূর্ণ করার পর রান আউট হন মার্ক ঊড। এভাবেই ভাগ্যের নির্মম পরিণতির স্বীকার হয়ে সুপার ওভারে খেলা গড়ায়।
সুপার ওভারে ১৬ রানের টার্গেটে ব্যাট করতে নেমে নিউজিল্যান্ড নির্দিষ্ট ওভার শেষে ১৫ রান তুলেই থেমে যায়। এই ১৫ রান তুলতে নিউজিল্যান্ডের জেমি নেশামের ব্যাট থেকে আসে একটি ওভার বাউন্ডারি। আর ইংল্যান্ডের ১৫ রানের ইনিংসে ছিলো দুইটি বাউন্ডারি। আইসিসির সুপার ওভারের নিয়মে, যদি সুপার ওভার ড্র হয় তবে যে দল বেশি বাউন্ডারি মারবে তারাই হবে ম্যাচ জয়ী। আর সেই হিসেবেই সবকিছু ড্র করেও ভাগ্য আর নিয়মের কাছে হেরে গেল নিউজিল্যান্ড।
সামান্য পুঁজি নিয়েও বোলিং দাপোটে পুরো টুর্নামেন্টে লড়াই করে টিকে থেকে ফাইনালে এসে আর ভাগ্য সহায় হলো না নিউজিল্যান্ডের। তাই তো অসাধারণ এক ফাইনাল শেষে টানা দ্বিতীয়বারের মত রানার্স আপ হয়েই সান্ত্বনা খুঁজছে ব্ল্যাক ক্যাপসরা। কিন্তু এমন দুর্ভাগ্যের পরাজয়ে কি ই বা হতে পারে তাদের সান্ত্বনা!