ক্রিকেট বরাবরই রোমাঞ্চকর খেলা। ক্রিকেটের যে ম্যাচ পক্ষ বা বিপক্ষ দল কোনো রকম প্রতিদ্বন্দ্বিতা ছাড়া জিতে যায় সে ম্যাচ দর্শকদের কাছে যেন পানসে লাগে। শ্রীলংকার প্রেমদাসা স্টেডিয়ামে নিদাহাস ট্রফির ফাইনাল খেলার টিকিট পেতে বাংলাদেশের প্রয়োজন ১২ রান। এমন রোমাঞ্চ কে হাতছাড়া করতে চায় বলুন!
শেষ ওভার শুরু হতে না হতেই শুরু হয়ে গেলো চরম বিতর্ক। পর পর দুই বল বাউন্স হওয়ার পরও আম্পায়ার নো বল না ডাকায় বাংলাদেশী সমর্থকরা হতভম্ব আর ক্যাপ্টেন সাকিব আল হাসান এর প্রতিবাদ স্বরূপ উইকেটে থাকা মাহমুদউল্লাহ রিয়াদ এবং রুবেল হোসেনকে মাঠ থেকে চলে আসার ইঙ্গিত দেন। পরবর্তীতে বাংলাদেশ দলের ম্যানেজার খালেদ মাহমুদ সুজন অনেক বুঝিয়ে শুনিয়ে তাকে শান্ত করে ড্রেসিংরুমে ফেরত পাঠান। কারণ ম্যাচ বয়কট করলে কি হতে পারে ভালোই ধারণা ছিল তাঁর। শ্রীলংকার সাথে সম্পর্কের বারোটা বেজে যেত বাংলাদেশের। আর ক্রিকেট ইতিহাসে প্রথম ম্যাচ বয়কট করার ইতিহাস আছে এই শ্রীলংকারই।
তবে সবচেয়ে মজার ব্যাপার হলো আজ বাংলাদেশ ম্যাচটি জিতেছে কিন্তু ঠিক দুবছর আগে ফাইনালে মাথা ঠান্ডা রাখেত না পারা এবং অনেকের কাছেই ভিলেন হয়ে যাওয়া এক সূর্য সন্তান মাহমুদউল্লাহ রিয়াদের কারণে। ১৮ বলে মহাকাব্যিক ৪৩ রানের ইনিংসে ম্যাচের ভাগ্য গড়ে দেন মাহমুদউল্লাহ। ১৮ বলের ইনিংসে তিনি ডট খেলেছেন মাত্র দুটি আর চার আছে তিনটি এবং ছয় দুটি।
তবে অনেকদিন ধরেই ভালো ফর্মে থাকা বাংলাদেশ দলের এই হার্ডহিটার মহাকাব্য রচনা করেছেন শেষ ওভারের শেষ চার বলে যখন বাংলাদেশের দরকার ছিলো ১২ রান। ওভারের তৃতীয় বলে উদানাকে কাভার দিয়ে একটি বাউন্ডারি মারেন মাহমুদউল্লাহ। চতুর্থ বল লো ফুলটস মিড উইকেটে ঠেলে নিয়ে দৌড়ে নেন ২ রান। এখন ২ বলে দরকার ৬ রান। ইন্ডিয়ার সাথে সেই ম্যাচের মতো এবার আর মাথা গরম করে কোনো ভুল শট খেলেননি তিনি। উদানাকে ফ্লিক করে স্কয়ার লেগের ওপর দিয়ে বল পাঠিয়ে দেন সোজা গ্যালারিতে। এক বল বাকি থাকতেই স্বপ্নের ফাইনালে বাংলাদেশ।
এর পরই শুরু হয় মুশফিকের কল্যানে ভাইরাল হওয়া নাজমুল ইসলামের আবিষ্কার ‘নাগিন নাচ’। নাজমুল ২০১৬ সালের বিপিএলে প্রথমবারের মতো এ নাচ নেচে সবার দৃষ্টি আকর্ষণ করেছিলেন। আর এইতো কিছুদিন আগে শেষ হওয়া বিপিএলে এই নাগিন নাচকে প্রায় বিখ্যাত বানিয়ে ফেলেন তিনি। ম্যাচে কোনো উইকেট পেলেই মাথার উপর হাত তুলে সাপের ভঙ্গিতে দেহ একিয়ে বেকিয়ে তার এই ডান্স দেয়ার ভঙ্গি বাংলাদেশী ক্রিকেট প্রেমীদের মাঝে দারুন সারা ফেলে সে সময়।
শ্রীলংকার বিপক্ষে সেই অবিস্মরণীয় জয়ের পর নাগিন নাচ বাংলাদেশ দলের খেলোয়াড় থেকে টিম ম্যানেজমেন্ট তো বটেই সারা দেশের ক্রিকেট প্রেমীদের মাঝে সংক্রামিত হতে থাকে। অনেকেই নাগিন নাচের ভঙ্গিমায় ছবি তুলে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে পোস্ট করেন। শুধু তাই নয় এই নাগিন নাচের উপর নজর পড়েছে বিশ্ব মিডিয়ারও।