এবারের এশিয়া কাপ শুরু থেকেই লড়াই দিয়ে শুরু হয়েছিল বাংলাদেশের জন্য। শ্রীলংকাকে বিশাল ব্যাবধানে হারানোর পর পরই দুটি পরাজয় ভেঙে দিয়েছিলো বাংলাদেশের ক্রিকেটারদের মনোবল। কিন্তু সেই ভাঙা মনোবলওয়ালা ক্রিকেটারদের নিয়েই তামিম সাকিবের মতো অভিজ্ঞ ক্রিকেটার ছাড়া বাংলাদেশকে ফাইনালে তোলার জন্য যদি কাওকে কাঠগড়ায় তুলতে হয় তবে তিনি অবশ্যই মাশরাফিই হবেন, অন্য কেউ নয়! বাংলাদেশের পারফরম্যান্স প্রশংসিত হয়েছে ক্রিকেট দুনিয়া জুড়েই কিন্তু দুঃখ একটাই যে আমরা শিরোপা জিততে পারিনি। তবে শেষ বল পর্যন্ত ভারতের মতো দলকে নাকানি চুবানি খাওয়ানোও তো মুখের কথা নয়। আর গোটা এশিয়া কাপ জুড়ে সবচেয়ে বেশি প্রশংসিত হয়েছে বাংলাদেশের অধিনায়ক মাশরাফি বিন মর্তুজার অধিনায়কত্ব।
পাকিস্তানের সাবেক ক্রিকেটার ও বর্তমান ধারাভাষ্যকার রমিজ রাজা মাশরাফির নতুন নাম দিয়েছেন ‘কাপ্তান অব এশিয়া কাপ’!
দুবাইয়ে এশিয়াকাপের ফাইনালে টপ অর্ডার ব্যাটসম্যানদের ধারাবাহিক ব্যর্থতা, ব্যাটিং বিপর্যয়, দুবাই-আবুধাবি-দুবাই ভ্রমণক্লান্তি, আবহাওয়া কোনো কিছুই যেন দমিয়ে রাখতে পারেনি ক্যাপ্টেন অফ এশিয়াকে।
কাল ম্যাচ শেষে রমিজ রাজা এবারের এশিয়া কাপ সম্মন্ধে পুরোপুরি ধারণা দিলেন এভাবে, ‘অনেক ভ্রমণ হয়েছে। কখনো দুবাই, কখনো আবুধাবি। (খেলা) কখনো গরমে, কখনো সন্ধ্যায়। তবে এ এশিয়া কাপের জবাব নেই। দুটি সেরা দল এশিয়া কাপের ফাইনালে খেলেছে। ভারতকে হারানো কঠিন ছিল। তবুও কী ধ্রুপদি ম্যাচটাই না হলো। বাংলাদেশ ২২২ করেও ভারতকে কী চাপেই না রেখেছিল! লড়াইটা শেষ বল পর্যন্ত পৌঁছেছে। এভাবে চ্যাম্পিয়ন হতে হয়, এভাবেই চ্যাম্পিয়ন দল তৈরি হয়। কী পারফরম্যান্স দেখা গেল। যেমন রোহিত শর্মা, শিখর ধাওয়ান, মোস্তাফিজুর, তেমনি আমার চোখে কাপ্তান অব এশিয়া কাপ হচ্ছে মাশরাফি বিন মর্তুজা।’
এই টুর্নামেন্টের সেরা অধিনায়ক হিসেবে কেন মাশরাফিকে বেঁচে নিলেন তিনি সেটির বাখ্যা দিলেন এভাবে, ‘আমি এ কারণে বলছি, তার হাতে ছিল না তামিম ইকবাল, ছিল না সাকিব আল হাসান। এই রানের পরও দলকে শেষ পর্যন্ত নিয়ে গেছে। দুর্দান্ত লড়াই করেছে ভারতের সঙ্গে।’ রমিজ পরামর্শ দিলেন বাংলাদেশের এই পারফরম্যান্স থেকে পাকিস্তানকেও শিখতে, ‘এ থেকে পাকিস্তানকে শিখতে হবে। পাকিস্তানকে চ্যাম্পিয়ন হতে হলে তাদের অনেক কিছু ঠিক করতে হবে। আপনার অধিনায়কত্ব ঠিক করতে হবে, ওপেনিং জুটি ঠিক হতে হবে। মোস্তাফিজ, ভুবনেশ্বর, বুমরার মতো স্ট্রাইক বোলার লাগবে। ভালো স্পিনার থাকতে হবে। এটা একটা ফাইনালের মতো ফাইনাল হয়েছে, দুর্দান্ত ফাইনাল।’
বাংলাদেশের ক্রিকেটের প্রতি মাশরাফির আত্মনিবেদন আর আবেগকে রমিজ যথার্থ ভাষায় প্রকাশ করেছেন। গতকাল ম্যাচের পর যে ভিডিওটি সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে সবচেয়ে বেশি আলোচনায় এসেছে সেটি হলো লিটন অর্ধশতক রান পুরো করার পর মাশরাফি বারবার বলছেন, ‘ইনিংসটা বড় কর, ইনিংসটা বড় কর’ এই ভিডিওটি। আর মাশরাফি বুকের উপর হাতের বাড়ি দিয়ে লিটনকে যখন ইঙ্গিতে বোঝালেন, দেশের জন্য নিজেকে উজাড় করে হৃদয় দিয়ে খেলতে, তখন কি মাশরাফি শুধুই বাংলাদেশ জাতীয় ক্রিকেট দলের অধিনায়ক হিসেবেই থাকেন!
মাশরাফির জন্য ভালোবাসা আর বাংলাদেশ জাতীয় ক্রিকেট দলের জন্য অনেক অনেক শুভকামনা।