বাংলাদেশী ক্রিকেট সাপোর্টারদের হতাশার প্রায় দোরগোড়ায় পৌঁছে দেয়া বাংলাদেশ ক্রিকেট দল এমন এক জয় উপহার দিলো যা বিশাল এক ক্ষত সৃষ্টি করে তাতে ভালোবাসার স্পর্শ দিয়ে আদর করে দিয়ে মন জয় করে নেয়ার মতো।
শেষবার বাংলাদেশ কোনো টি টোয়েন্টি ম্যাচ জিতেছিল প্রায় বছর খানেক আগে তাও আবার এই শ্রীলংকার মাঠেই। সম্প্রতি গত তিন সিরিজে বাংলাদেশের পারফরমেন্স এতটাই খারাপ ছিল যে, যে মানুষগুলো হারলেও বাংলাদেশ জিতলেও বাংলাদেশ বলে বাংলাদেশ ক্রিকেটদলের প্রতি সবসময় পজিটিভ দৃষ্টিভঙ্গি নিয়ে চলে সে ক্রিকেট প্রিয় মানুষগুলোও হতাশার দোরগোড়ায় পৌঁছে যাচ্ছিলো। তবে আজকের জয় যেন বাংলাদেশের ক্রিকেট প্রিয় মানুষগুলোর শরীরে চরম গরমে বসন্তের মৃদু হাওয়া বইয়ে দিচ্ছে।
তাসকিনের প্রথম ওভারে ১৩ রান দেয়ার পর আজ কি হতে যাচ্ছে সে বিষয়ে সবাই একটি ধারণাতে পৌঁছে গেছিলো। আর শ্রীলংকা যখন ২০ ওভারে ৬ উইকেট হারিয়ে ২১৪ রান করলো তখন সবাই নিশ্চিত ম্যাচের ভবিষ্যৎ সম্মন্ধে। কারণ যে বাংলাদেশ সর্বোচ্চ ১৬৫ রানের বেশি রান তাড়া করে জিততে পারেনি এর আগে সে বাংলাদেশ কিভাবে ২১৪ রান তাড়া করার চিন্তা করে। তাও আবার এক নবিশ অধিনায়কের আন্ডারে এবং যে বাংলাদেশ দলের কোনো কোচ নেই।
তবে তামিম ইকবাল ও লিটন দাসের স্বতসফুর্ত ভাবে খেলে যাওয়া দেখে মনে হচ্ছিলো তাদের কাছে কোনো চাপই যেন চাপ নয়। ২৫ বলে ৫০ পেরোনো বাংলাদেশ ১০০ রানের দেখা পেয়েছে ৫৬ বলে অর্থাৎ ৯.২ ওভারে যেয়ে।
বাংলাদেশের খেলায় প্রকৃত শক্তি হয়ে দেখা দিয়েছিলেন লিটন দাস। তার ২৯ বলে ৪৭ রানের ইনিংসে ছিল চোখ ধাঁধানো ৫ টি ছক্কা আর ২ টি চার। তবে ১৪ ওভারে ১৫০ করে ফেলা বাংলাদেশ দলে আজ সৌম্যের ২২ বলে ২৪ রানের ইনিংসটি ছিল বড্ড বেমানান। কারণ সৌম্যকে সবাই টি টোয়েন্টি স্পেশালিস্ট হিসেবে চেনে। তামিমের ২৯ বলে ৪৭ রানের দৃষ্টিনন্দন ইনিংসটি ছিল ৬ টি চার আর ১ টি ছয়ে সাজানো।
তবে, যে কথাটি না বললেই নয় তা হলো এ কি দেখালেন মুশফিক। অসাধারণ বিদ্ধংসী ৪ টি ছয় (যেখানে একটি ছয় ৯৬ মিটার দূরত্ব অতিক্রম করেছে) আর দৃষ্টিনন্দন ৫ টি চারে ৩৫ বলে ৭২ করার পথে মুশফিকের স্ট্রাইক রেট ছিল ২০৫.৭১। যা সত্যিই অসাধারণ।
শেষ ছয় ওভারে বাংলাদেশের দরকার ছিল ৬৫ রান কিন্তু ১৪ ওভারে ১৫০ তুলে ফেলার পর দর্শকদের বিশ্বাস হচ্ছিলোনা বাংলাদেশ পারবে। কারণ এই টি টোয়েন্টিতেই যে তিন বলে ১ রান তুলতে না পারার এক বিরল রেকর্ড আছে এই বাংলাদেশেরই। তবে ভাইরা ভাই আবারো দেখিয়ে দিলেন তারা দলের জন্য কি করতে পারেন। যদিও মাহমুদুল্লাহ তার ইনিংসটিকে খুব বেশি দূর এগিয়ে নিতে পারেননি তবুও ১ চার আর ১ ছয়ে ১১ বলে ২০ দলের জন্য ভালো একটি স্কোর। কিন্তু মাহমুদউল্লাহ ফিরে যাওয়াতেই মনের জোর অনেকটাই কমতে থাকে বাংলাদেশ দলের সাপোর্টারদের। তার মধ্যে আছে সাব্বিরের অদ্ভুত রান আউট।
কিন্তু কেন যেন মুশফিক এখন পর্যন্ত মাঠে আছে বলে নানান নেগেটিভ চিন্তাভাবনার পাশাপাশি পজিটিভ চিন্তাগুলিও আসতে থাকে মনের মধ্যে। বাংলাদেশের বেশিরভাগ জয়ে যে মানুষটির অবদান অনস্বীকার্য সে মুশফিক তো ক্রিজে আছেন। জয় আমাদের হবেই।
অসাধারণ ব্যাটিংয়ে বাংলাদেশ যতটাই দৃষ্টি কেড়েছে বাজে বোলিংয়েও ততটাই কষ্ট দিয়েছে। চার ওভারে ৪৮ রান দেয়া মুস্তাফিজুর নিয়েছেন ৩ উইকেট আর ক্যাপ্টেন মাহমুদুল্লাহ দুই ওভার বল করে ১৫ রান দিয়ে ২ উইকেট নিয়েছেন।
তবে একটি কথা না বললেই নয়, বাংলাদেশী ক্রিকেটাররা বাংলাদেশের মানুষগুলোকে জয় তখনই উপহার দেন যখন চিন্তায় চিন্তায় তাদের হার্ট এটাক করার উপক্রম হয়।