বিশ্বকাপে বাংলাদেশ দলের বাদ পড়ার পর দল দেশে ফেরার আগেই কানাঘুষা চলতে থাকে স্টিভ রোডসকে প্রধান কোচ থেকে বরখাস্ত করার কথা। কিন্তু হঠাৎ করেই সেই গুঞ্জন বাস্তবে রূপ নিলো। বোর্ডের নীতিনির্ধারকরা দেশে ফেরার পরপরই কোচকে নিয়ে আলোচনায় বসেন। অতঃপর জানা যায়, স্টিভ রোডসকে তার দায়িত্ব থেকে অব্যাহতি দিলো বাংলাদেশ ক্রিকেট বোর্ড।
হঠাৎ করেই তড়িৎগতিতে নেয়া এই সিদ্ধান্ত সবাইকে চমকে দেয়। কারণ চুক্তির মেয়াদ এক বছর বাকি থাকা সত্ত্বেও রোডসকে কেন চাকরিচ্যুত করা হল এ নিয়ে সবার মনে প্রশ্ন জাগে। অবশেষে জানা গেলো এর মূল কারণ। বিসিবির সভাপতি নাজমুল হাসান পাপন বলেন, ‘বোর্ডের সাথে কোচের দূরত্ব ও হুট করে সিদ্ধান্ত পরিবর্তনের প্রবণতার কারণেই রোডসকে প্রধান কোচের পদ থেকে সরান হয়েছে।’
টিম মিটিংয়ে নির্ধারিত দল বদলে রোডস চোট আক্রান্ত ক্রিকেটারদের নিয়ে একাদশ সাজিয়েছিলেন, এমনটি উল্লেখ করে পাপন বলেন, ‘ইঞ্জুরড প্লেয়ার রাত সাড়ে এগারোটায় বলছে সে হাত নাড়াতে পারছে না। পরদিন সকালে দেখি সেই ইঞ্জুরড প্লেয়ারই খেলছে। তিনটা ইঞ্জুরড প্লেয়ার খেলছে, আর যাদের খেলার কথা তারা নেই। এগুলো এর আগে কখনো দেখিনি। এটাই প্রথম বিষয়- না বলে দল পরিবর্তন করে ফেলা। মিটিং করে দল ঠিক করে মাঠের নামার পর যদি দেখি অন্য দল এটা তো দলের জন্যও অস্বস্তিকর ব্যাপার।’
এখানেই শেষ নয়। আফগানিস্তানকে হারানোর পর এক সপ্তাহ ম্যাচ ছিল না বাংলাদেশের। যদিও তখন যে দুটি ম্যাচ বাকি, সেখানে প্রতিপক্ষ ভারত ও পাকিস্তানের মত বিশ্বকাপজয়ী দল। এই দুটি ম্যাচের উপর নির্ভর করত বাংলাদেশের সেমিফাইনালের ভাগ্যও। যদিও সবাইকে হতাশ করে টাইগাররা দুটি ম্যাচেই হেরে যায়, তাতে পয়েন্ট টেবিলের আটে অবনমিত হয়ে ফিরতে হয় দেশে।
এজন্য অনেকেই দায়ী করছেন শেষ দুই ম্যাচের আগে ক্রিকেটারদের পাওয়া পাঁচদিনের ছুটিকে। বোর্ড সভাপতির দাবি— ছুটি মঞ্জুরের ক্ষেত্রেও রোডসের হস্তক্ষেপ ছিল যা সম্পর্কে জানতেন না বোর্ডের কর্তারাও।
তিনি বলেন, ‘আমি এসেছি বাংলাদেশ থেকে ওদের সাথে দেখা করতে। এখন তাদের ছুটিটা দিল কে? কীভাবে ছুটি মিলল? ওরা (রোডস) এরকমই। এটা একেকজনের স্টাইল। ভারত আর পাকিস্তানের ম্যাচের আগে পাঁচদিন ছুটি! তারপর ওরা বার্মিংহামেই (ভারত ও পাকিস্তানের বিপক্ষে বাংলাদেশের ম্যাচের ভেন্যু) ছিল না, যেখানে এই দুটি খেলা! এর আগে আমরা আয়ারল্যান্ড থেকে এসে প্র্যাকটিস ম্যাচ খেলেছি এত টাকা খরচ করে। বলছি না এগুলো (কোচের এমন স্বেচ্ছাচারী আচরণ) খারাপ, কিন্তু আমরা এসবে অভ্যস্ত না। তারা যে স্টাইল বলছে সেটা হতে পারে ইংল্যান্ড-অস্ট্রেলিয়ার জন্য প্রযোজ্য। আমাদের জন্য মনে করি আরও একটু জেনেশুনে আলাপ করে সিদ্ধান্ত নেওয়া উচিৎ। হঠাৎ নেওয়া তার এসব সিদ্ধান্তে আমার মনে হয়েছে তার সাথে আমাদের একটি দূরত্ব সৃষ্টি হয়েছে।’
নাজমুল হাসান পাপনের অভিমত, ‘গুরুত্বপূর্ণ ম্যাচের আগে এভাবে ছুটি কাটানোতে অভ্যস্ত নন বাংলাদেশের ক্রিকেটাররাও। বিশেষ করে এমন দুটি গুরুত্বপূর্ণ ম্যাচের আগে পাঁচদিন খেলোয়াড়দের অনুশীলনের বাইরে রাখার বিষয়টি অবাকই করেছে তাকে। বিস্ময় প্রকাশ করে তিনি বলেন, ‘আমাদের খেলোয়াড়রাই তো এতে অভ্যস্ত না। সামনে ভারত-পাকিস্তানের সাথে খেলা আর এর আগে পাঁচদিনের ছুটি!’