6.7 C
New York
Friday, March 29, 2024

Buy now

বাংলাদেশের কাছে সেরা হয়ে থাকবে এই এশিয়া কাপটাই

habibul bashar, khaled masud pilot,Shahriar Nafees,Bangladeshi cricketer, bd sports news, cricket, asia cup 2018,
হাবিবুল বাশার, খালেদ মাসুদ, শাহরিয়ার নাফীস

ফাইনালে জয় কি বাংলাদেশের জন্য অধরাই থেকে যাবে! কাল এশিয়া কাপের ফাইনালে ভারতের কাছে ৩ উইকেটে হেরে আরো একবার এশিয়া সেরা হওয়ার স্বপ্নভঙ্গের সঙ্গী হতে হলো বাংলাদেশকে। শিরোপা জিততে না পারলেও দুর্দান্ত খেলে এবারের এশিয়া কাপে বাংলাদেশের মানুষকে মনে করিয়ে রাখার মতো অনেক কিছুই করেছেন মাশরাফিরা, মুশফিক, মাহমুদুল্লাহরা। হাবিবুল বাশার, খালেদ মাসুদ ও শাহরিয়ার নাফীসের মতো সাবেক সফল ক্রিকেটার প্লাস বিশ্লেষকদের চোখে এই স্বপ্নভঙ্গের হাহাকারের চেয়ে প্রাপ্তিগুলোই যেন বড় হয়ে উঠেছে।

অনেক হতাশা, শ্রীলংকার ম্যাচের পর, পর পর দুইটি হার এবং আফগানিস্তানের ম্যাচ দিয়ে আবার ফিরে আসা। এবং, তারপর সবই যেন আনন্দ বেদনার মিশ্রনে ভরপুর সাহিত্য। প্রথম আলোর কাছে সেটিই বিশ্লেষণ করেছেন হাবিবুল বাশার, খালেদ মাসুদ ও শাহরিয়ার নাফীস। আসুন দেখে নিই আমাদের একসময়ের এই সফল মানুষগুলোর চোখে কেমন হলো এবারের এশিয়া কাপ।

হাবিবুল বাশার, সাবেক অধিনায়ক ও বর্তমানে নির্বাচক
‘এই এশিয়া কাপটাই সেরা বলব। সূচিটা অনেক কঠিন ছিল, আমরা ফাইনাল খেলেছি এক দিনের বিরতিতে। ভারত সেখানে দুই দিনের বিরতি পেয়েছে। এটা কিন্তু খেলায় অনেক প্রভাব ফেলে। কন্ডিশনের কারণেই ফেলে। টুর্নামেন্টের শুরু থেকেই দলটা চোটজর্জর। তামিম (ইকবাল) নেই, সাকিব (আল হাসান) সবশেষ দুইটা ম্যাচ খেলতে পারেনি।

মূল একাদশের সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ দুই খেলোয়াড়কে ছাড়াই খেলতে হয়েছে আমাদের। এমনিতে প্রচণ্ড গরম, এর মধ্যে ছিল ভ্রমণ ঝক্কি। দুবাই থেকে প্রায় ১৫০ কিলোমিটার দূরের আবুধাবি থেকে রাত তিনটায় খেলে ফিরেছে। এক দিন পর আবার খেলতে নামতে হয়েছে। ফাইনালে প্রতিপক্ষকে অতটা ভোগান্তি পোহাতে হয়নি।

গ্রুপ পর্বে আফগানিস্তানের কাছে আমরা যে ম্যাচটা হেরেছি, সেটা নিয়ে ভাবি না। পরের ম্যাচে আমাদের একাদশ তৈরিই ছিল মূল ভাবনা। সুপার ফোরে ভারতের বিপক্ষে ম্যাচটাই শুধু খারাপ করেছি। বাকি ম্যাচগুলো তো আমরা ভালো খেলে জিতেছি। যে জিনিসটা সবচেয়ে খারাপ লাগে, প্রথম ম্যাচ জেতার পর মনে হলো আমরা যুদ্ধে জিতেছি। খেলোয়াড়েরা সবাই জাতীয় বীর! পরের দুইটা ম্যাচ হেরে যাওয়ার পর আমাদের সিস্টেম খারাপ হয়ে গেল, ক্রিকেট বোর্ড খারাপ হয়ে গেল!

বলা হলো, আমাদের হাতে পর্যাপ্ত বিকল্প খেলোয়াড় নেই। এই নেই, সেই নেই! এগুলোই সবচেয়ে খারাপ লাগে। অনেকে আমাদের খেলোয়াড়দের দেশপ্রেম নিয়েও প্রশ্ন তোলেন তখন। এই পারফরম্যান্সের পরও যদি দেশপ্রেম নিয়ে প্রশ্ন তোলা হয়, তাহলে বলার কিছু নেই।
সাকিব-তামিম না থাকার পরও বাংলাদেশ যে খেলাটা খেলেছে, অনেক তৃপ্ত।

আমরা আশা করেছিলাম কাল ভারতের যে ব্যাটিং লাইনআপ, তাতে ২৮০-২৯০ করতে হবে। পরে দেখলাম ২২২ করেছি, আর ২০টা রান বেশি করতে পারলে ম্যাচের গল্প অন্য রকম হতো। গুরুত্বপূর্ণ বিষয় হচ্ছে, এ অবস্থায় আমরা কিন্তু হাল ছেড়ে দিইনি। সব সময় বলা হয়, পাকিস্তান বোলিংয়ে অনেক শক্তিশালী।

কাল যে উইকেটে খেলা হয়েছে, এই উইকেটে ভারত কিন্তু ওদের উড়িয়ে দিয়েছে। সব সময়ই নেতিবাচক দিক না খুঁজে এবার বাংলাদেশকে কৃতিত্ব দেওয়া উচিত। এই এশিয়া কাপটা সবার ওপরেই রাখব। আগের দুই এশিয়া কাপেও ফাইনাল খেলেছি। এটাকে এগিয়ে রাখব এই কারণে, এবার আমাদের ফাইনাল খেলতে হয়েছে অনেক প্রতিবন্ধকতা পেরিয়ে। এই প্রতিকূল পরিস্থিতিতে খেলোয়াড়েরা যে চারিত্রিক দৃঢ়তা দেখিয়েছে, অবশ্যই খুশি।’

খালেদ মাসুদ, সাবেক অধিনায়ক
‘বাংলাদেশ দলের ইতিবাচক দিক অনেক কিছুই আছে। একটা টুর্নামেন্ট খেললে আপনি ইতিবাচক অনেক কিছুই পাবেন। ইতিবাচক ছিল বলেই তো বাংলাদেশ ফাইনালে খেলেছে। যেমন শ্রীলঙ্কা দল অনেক নেতিবাচক ছিল বলে তারা সুপার ফোরেও উঠতে পারেনি। এবার আমাদের সবচেয়ে ইতিবাচক দিক ছিল মাশরাফি বিন মুর্তজার অধিনায়কত্ব।

আমরা জানি, এই দলটা দাঁড়িয়ে আছে পাঁচ স্তম্ভের ওপর। এর মধ্যে সাকিব আল হাসান ও তামিম ইকবাল নেই। সাকিব না থাকাটা বিরাট ক্ষতি, বাঁহাতি স্পিনের সঙ্গে টপ অর্ডারে তাঁর সার্ভিস, প্রতিপক্ষ সব সময়ই এমন খেলোয়াড় নিয়ে চাপে থাকে। ভালো খেলোয়াড় রান না–ও পেতে পারে, উইকেট না–ও পেতে পারে। তবে প্রতিপক্ষের জন্য সে সব সময়ই চাপের। কারণ, ক্রিকেট অনেকটাই মনস্তাত্ত্বিক খেলা।

ব্যাটিংয়ে শুধু মুশফিক ধারাবাহিক রান করেছে। মাহমুদউল্লাহ, মিঠুন, লিটনও ভালো খেলেছে। তবে ধারাবাহিকতা ছিল না। বোলিংয়ে অবশ্য মোস্তাফিজ ধারাবাহিক ভালো করেছে। যে ম্যাচগুলো জিতেছি, একেক ম্যাচে একেকজনের অবদান ছিল। মূল ঘাটতিটা ছিল দল হিসেবে খেলতে পারিনি আমরা। এরপরও দল যে ফাইনালে উঠেছে, ফাইনালে শেষ বল পর্যন্ত লড়েছে। তাদের কৃতিত্ব দিতেই হবে। দল হিসেবে খেলতে পারলে ভবিষ্যতে ফাইনালে হারের দুঃখটা আর থাকবে না।

তবে এর জন্য আরও ট্যাকটিক্যাল হতে হবে। এই পর্যায়ে এসে ব্যাটসম্যানদের সহজে উইকেট দেওয়া যাবে না। ভালো লার্নার হতে হবে, আজকের ভুলকে কাল শক্তি হিসেবে ব্যবহার করতে হবে। এখানে এখনো ঘাটতি রয়ে গেছে আমাদের, এটি উন্নতি করতে পারলে ভবিষ্যতে ফাইনাল জয়ের স্বপ্ন ভঙ্গ হবে না।

সব মিলিয়ে আমরা এই এশিয়া কাপে ভালো খেলেছি। বোলিং বিভাগটা অসাধারণ করেছে। ফিল্ডিংও ভালো হয়েছে। তবে ব্যাটিংয়ে অনেক ঘাটতি ছিল। এক-দুজন জ্বলে উঠেছে প্রতি ম্যাচে। ব্যাটিংয়ে সম্মিলিত পারফরম্যান্স হলে অনেক খুশি হতাম। সব মিলিয়ে ভালো হয়েছে। খারাপ বলা যাবে না।’

শাহরিয়ার নাফীস, ওপেনার
‘ক্রিকেটে এশিয়া কাপটা চ্যাম্পিয়নস লিগ বা ইউরো ফুটবলের মতো। সারা বিশ্বই খেলে। ফুটবলের বেশির ভাগ শক্তিশালী দল ইউরোপে, ফিফা বিশ্বকাপ চ্যাম্পিয়ন বা তাদের দর্শক বেশি। এশিয়া কাপও তা-ই। দর্শক, দল বা চ্যাম্পিয়ন সবকিছুই বেশি এই অঞ্চলে। এমন গুরুত্বপূর্ণ টুর্নামেন্টে বাংলাদেশ গত চারবারের তিনবার শিরোপার জন্য লড়েছে। বড় গলায় বলতে পারি, বাংলাদেশ এখন এশিয়ার দ্বিতীয় শক্তিশালী দল হিসেবে নিজেদের প্রতিষ্ঠা করেছে। পাকিস্তান, শ্রীলঙ্কা, আফগানিস্তানের চেয়ে আমরা অনেক বড় দল, সেটা প্রমাণ হয়েছে। এটাই বাংলাদেশ ক্রিকেটের সবচেয়ে বড় অর্জন।

সাকিব-তামিম না থাকার পরও বাংলাদেশ ফাইনালে দুর্দান্ত লড়াই করেছে, এর অর্থ শক্তিশালী দল হিসেবে আমরা দাঁড়িয়ে গেছি। নির্দিষ্ট দু-একজনের ওপর নির্ভর না থেকে বাংলাদেশ যে দলগত পারফরম্যান্সের ওপর নির্ভরশীল, সেটাও প্রমাণ হয়েছে। এই এশিয়া কাপটা আমাদের কাছে স্পেশাল হয়ে থাকবে। আমাদের অনেক প্রতিবন্ধকতা পেরিয়ে ফাইনালে উঠতে হয়েছে। সবকিছু চিন্তা করলে এই এশিয়া কাপটা এখনো পর্যন্ত বাংলাদেশের কাছে সেরা এশিয়া কাপ।’

সূত্র: প্রথম আলো

Related Articles

Leave a reply

Please enter your comment!
Please enter your name here

Stay Connected

0FansLike
3,913FollowersFollow
0SubscribersSubscribe
- Advertisement -spot_img

Latest Articles