গতকাল (মঙ্গলবার) বিশ্বকাপের সবচেয়ে বড় দাবিদার ইংল্যান্ডকে হারিয়ে বিশ্বকাপের ১২ তম আসরে প্রথম সেমিফাইনালিস্ট হিসেবে নাম লিখিয়েছে অস্ট্রেলিয়া। আজ বুধবার আনপ্রেডিকটেবল পাকিস্তানের সাথে জিতলে দ্বিতীয় দল হিসেবে সেমির টিকেট কাটবে নিউজিল্যান্ড।
তবে এখনো পর্যন্ত সেমির আশা বাঁচিয়ে রাখতে পেরেছে বাংলাদেশ। সেমিতে যেতে টাইগারদের টেক্কা দিতে হবে ইংল্যান্ড, শ্রীলঙ্কা, ভারত ও পাকিস্তানের সঙ্গে। সমীকরণের কথা চিন্তা না করে বাংলাদেশ দলের সবার আগে প্রয়োজন ভারত-পাকিস্তানের বিপক্ষে জয়।
আর টাইগাররা এই দুই চিরপ্রতিদ্বন্দ্বীদের সাথে জয় ছিনিয়ে আনতে পারলে তবেই বাংলাদেশ ক্রিকেট দলের সাবেক স্পিনার আব্দুর রাজ্জাক বাংলাদেশকে সেমিফাইনালে দেখছেন। বিশ্বকাপের ১২ তম আসরে বাংলাদেশের পক্ষ থেকে আইসিসির শুভেচ্ছাদূত হিসেবে ইংল্যান্ড গেছেন তিনি। আর বাংলাদেশের প্রতিটি ম্যাচের পরই কলাম লিখেন রাজ্জাক। বিডি স্পোর্টস নিউজ পাঠকদের জন্য আব্দুর রাজ্জাকের কলামটি হুবুহু তুলে ধরা হলো:
ব্যাট-বল হাতে সাকিব যা করছে, সত্যিই অসাধারণ। এটা এক কথায় অবিশ্বাস্য ব্যাপার। বিশেষ করে ব্যাটিংটা। আইপিএলে তেমন একটা সুযোগ না পেলেও, সে কঠোর পরিশ্রম করেছে। তার বিশেষত্ব হলো, যে জিনিসটা প্রয়োজন, সে জিনিসটা ধরতে পারে এবং তথানুযায়ী কাজ করে।
সারা বিশ্বে একজন দুর্দান্ত অলরাউন্ডার হিসেবে পরিচিত হলেও, এবারের বিশ্বকাপে নিজের ব্যাটিং সামর্থ্যের প্রমাণও দিচ্ছে সাকিব। ক্যারিয়ারের শুরুতে সাকিব ছিলো একজন ব্যাটিং অলরাউন্ডার। তবে পরে ধীরে ধীরে নিজের বোলিংটাও আরও উন্নত করেছে সে।
মুশফিকুর রহীমের সঙ্গে সাকিবের জুটিটা এবারের বিশ্বকাপে বাংলাদেশ দলের জন্য গুরুত্বপূর্ণ একটি বিষয় হয়ে গেছে বলা চলে। জুটি গড়ার সময় দুজনের মধ্যকার বোঝাপড়া সত্যিই অসাধারণ। লম্বা সময় ধরে একসঙ্গে খেলায়, নিজেদের খেলাটা বুঝে দুজন। এরা দুজনই সত্যিকারের যোদ্ধা। তারা মানসিকভাবে শক্ত এবং ক্রিকেটার হিসেবেও চৌকষ।
আফগানিস্তানের বিপক্ষে জয়টা অবশ্যই টিম পারফরম্যান্স। তবু এখানেও সাকিব নিজেকে আলাদা করে তুলেছে ব্যাটিং-বোলিং দিয়ে। ছেলেরা সেমিফাইনালে খেলতে চায়। সে লক্ষ্যপূরণে এমন জয় ছাড়া আর কোনো পথও খোলা নেই।
এ ম্যাচের শুরুতেই একটা জিনিস বোঝা গিয়েছিল যে বাংলাদেশ ও আফগানিস্তানের মধ্যে মিল রয়েছে বেশ কিছু। যেমন দুই দেশেরই শক্তির জায়গা স্পিন। যদিও সবাই ম্যাচের আগে বলছিল বাংলাদেশের চেয়ে আফগানিস্তানের বোলিং শক্তিশালী, আমি এটা সঙ্গে দ্বিমত পোষণ করেছিলাম।
সত্যি করে বললে বাংলাদেশের স্পিনারদের কাছ থেকে এমন দুর্দান্ত পারফরম্যান্সই আশা করছিলাম। আমরা সবাই জানি টার্নিং উইকেট পেলে সাকিব কিংবা মেহেদী মিরাজ কতোটা ভয়ঙ্কর হতে পারে। ঠিক সেটাই হয়েছে ম্যাচে।
বাংলাদেশের পরবর্তী দুই ম্যাচ এশিয়ান প্রতিদ্বন্দ্বী ভারত ও পাকিস্তানের বিপক্ষে। তবে আমার বলতেই হচ্ছে যে দলের কোনো খেলোয়াড়ই প্রতিবেশি দেশ বলে ম্যাচ দুইটিকে অন্য কোনো দৃষ্টিতে দেখবে না। তারা শুধুই এখন প্রতিপক্ষ।
বিশ্বকাপে এখনও পর্যন্ত দুর্দান্ত খেলছে ভারত। তাদের নামের পাশে ফেভারিটের তকমাও দেয়া আছে। সবাই এ দলের ব্যাপারে কথা বলছে। যেটি আমাদের খেলোয়াড়দের জন্য সুযোগ হিসেবেই দেখছি আমি। আশা করছি এ চ্যালেঞ্জ নিতে প্রস্তুত থাকবে বাংলাদেশ।
ভারতের বিপক্ষে আফগানিস্তানের পারফরম্যান্স দেখে বাংলাদেশ কিছু শিক্ষা নিতে পারে। আফগানরা জিততে না পারলেও, ম্যাচটা জমিয়ে তুলেছিল। তবে সব দলেরই খেলার ধরন ভিন্ন। সে ম্যাচে আফগানিস্তানের বোলিং-ফিল্ডিং দারুণ ছিল। আমাদের ব্যাটিংটাও ভালো করতে হবে।
নিজেদের শক্তি বুঝে খেলতে পারলে ভালো ফল আসবে। বাংলাদেশের বোলারদের গুরুদায়িত্ব নিতে হবে। কারণ ভারতের ব্যাটিং লাইনআপ শক্তিশালী। আমি বিশ্বাস করি বোলাররা পারবে চ্যালেঞ্জ নিতে।
বাংলাদেশ দল এখন সত্যিই দারুণ খেলছে। আমি এখনও মনে করি সেমিফাইনালে যেতে চাইলে সে পথ একদমই সহজ নয়। তবে নিজেদের সামনে বেশ ভালো সুযোগ তৈরি করে রেখেছে বাংলাদেশ।