দুই দেশের সম্পর্ক শুধু খারাপ বললেই হবেনা যেন সাপে-নেউলে। রাজনৈতিক এই সম্পর্কের ছায়া স্বাভাবিক ভাবেই পড়েছে খেলার উপরেও। বলছি ভারত-পাকিস্তানের কথা। দুই দেশের খেলা মানেই যেন শতকোটি মানুষের মনের আলোড়ন। আর খেলাটি যদি বিশ্বকাপের আসরে হয় তাহলে তো কথাই নেই।
কিন্তু ক্রিকেট বিশ্বকাপের কোনো আসরেই ভারতকে কখনো হারাতে পারেনি পাকিস্তান। ওয়ানডে ও টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপে এর আগে ১২বার মুখোমুখি হলেও প্রতিবারই হার নিয়ে ফিরতে হয়েছে পাকিস্তানকে। শেষপর্যন্ত আনলাকি থার্টিনই লাকি হয়ে দেখা দিলো পাকিস্তানের কাছে। অবশেষে ইতিহাস পাল্টাতে পারল তারা।
বাবর আজমের পাকিস্তান আজ ২০২১ টি–টোয়েন্টি বিশ্বকাপের প্রথম দেখাতেই ১০ উইকেটে ভারতকে যেন উড়িয়েই দিলো। ৭৯ রানে মোহাম্মদ রিজওয়ান ও ৬৮ রানে বাবর আজম দুজনেই অপরাজিত।
জয়ের জন্য ১৫২ রানের লক্ষ্য নিয়ে খেলতে নেমে পাকিস্তানকে দারুণ শুরু এনে দেন বাবর ও রিজওয়ান। শুরুতেই পাওয়ার প্লেতে কোন উইকেট না হারিয়ে ৪১ রান তোলে পাকিস্তান।
সময় যত গড়িয়েছে ম্যাচে রিজওয়ান ও বাবর আধিপত্য ততই বিস্তার হয়েছে। পাকিস্তানের দলীয় ১০০ রান আসে ১২.৫ ওভার থেকে। এর আগে চারটি চার ও দুটি ছক্কার সাহায্যে ৪০ বলে হাফ সেঞ্চুরি তুলে নেন পাকিস্তানের অধিনায়ক বাবর আজম।
বাবরের পর জসপ্রিত বুমরাহর বলে চার মেরে ৪১ বলে হাফ সেঞ্চুরি করেন রিজওয়ান। পুরো ম্যাচ জুড়ে ভারতীয় বোলাররা বাবর-রিজওয়ানের সামনে কোন পাত্তাই পাননি।
অবশেষে ১৫২ রানের লক্ষ্য তাড়া করতে নেমে রিজওয়ান-বাবর জুটিতে ১৩ বল বাকি থাকতে ১০ উইকেটের জয় পেয়ে যায় পাকিস্তান। রিজওয়ান ৭৯ এবং বাবর ৬৮ রানে অপরাজিত ছিলেন। ভারতের কোন বোলারই উইকেটের দেখা পাননি।
এর আগে টসে হেরে ব্যাটিংয়ে নেমে ভারতের শুরুটা মোটেও ভালো হয়নি। প্রস্তুতি ম্যাচে দারুণ ব্যাটিং করা রোহিত শর্মা প্রথম ওভারেই শাহীন শাহ আফ্রিদির বলে লেগ বিফোরের ফাঁদে পড়ে সাজঘরে ফেরেন। গোল্ডেন ডাক মারেন তিনি।
এর পরেই আসে আবারো আফ্রিদি ঝলক। দারুণ ফর্মে থাকা লোকেশ রাহুলকে মাত্র ৩ রানেই ফেরান তিনি। আর তাতেই কিছুটা চাপে পড়ে ভারত। চারে নেমে ভালো শুরুর ইঙ্গিত দিলেও পেসার হাসান আলির বলে মোহাম্মদ রিজওয়ানকে ক্যাচ দিয়ে প্যাভিলিয়নের পথে হাঁটেন সূর্যকুমার যাদব। ১১ রান করা ডানহাতি এই ব্যাটার ইনিংস বড় করতে পারেননি।
শেষপর্যন্ত ভারতকে দলে ফেরায় চতুর্থ উইকেট জুটিতে দারুণ ব্যাটিং করা কোহলি ও প্যান্ট। তারা দুজনে মিলে যোগ করেন ৫৩ রান। সাদাব খানের হাতে কট এন্ড বোল্ড হওয়ার আগে ৩০ বলে ৩৯ রানের ইনিংস খেলেন তিনি। দলের বিপর্যয়ের দিনে শক্ত হাতে একপাশ আগলে রাখা ভারতীয় অধিনায়ক বিরাট কোহলি ৪৯ বলে পাঁচ বাউন্ডারি ও এক ছক্কায় ৫৭ রান করে আফ্রিদির বলে রিজওয়ানকে ক্যাচ তুলে দিয়ে আউট হন।
শেষ দিকে হার্দিক পান্ডিয়া ৯ বলে ১১ রান করেছেন। তাতে ২০ ওভারে ৭ উইকেট হারিয়ে ভারতের সংগ্রহ দাঁড়ায় ১৫১ রান।
ভারতের সেরা তিন উইকেট নেয়ায় অবদান রাখায় প্লেয়ার অব দ্যা ম্যাচের মুকুট উঠেছে শাহীন শাহ আফ্রিদির মাথায়।
সংক্ষিপ্ত স্কোর:
ভারত- ১৫১/৭ (ওভার ২০) (কোহলি ৫৭, পান্ত ৩৯, আফ্রিদি ৩/৩১, হাসান ২/৪৪)
পাকিস্তান- ১৫২/০ (ওভার ১৭.৫) (রিজওয়ান ৭৯, বাবর ৬৮)