ক্রিকেট মহলে বিশ্বে ও আইসিসি তে দাপুটে দল ভারত। শুধু তারা উপর মহলেই দাপট রাখেনা, তাদের দাপট খেলার মাঠেও। আর এই মূহুর্তে ভারতীয় ক্রিকেটাঙ্গন সহ পুরো বিশ্বে আলোচনার কেন্দ্রে ধোনির অবসর ও ভারতীয় কোচ নিয়ে। কেননা ভারতের বর্তমান ক্রিকেট কোচ রবি শাস্ত্রী হারাতে বসছেন তার চাকরি।
রবি শাস্ত্রীর চুক্তির মেয়াদ শেষ হওয়ার পরেও আরো ৪৫ দিন তার চুক্তি বাড়ানো হয়েছে। আর এই মেয়াদ শেষ হলে কপিল দেবের নেতৃত্বাধীন ক্রিকেট অ্য়াডভাইসারি কমিটি বেছে নিবে তাদের নতুন কোচ। তাই শাস্ত্রী পুনরায় কোচ হতে চাইলে তাকেও করতে হবে অন্য সকলের মত আবেদন।
অনিল কুম্বলে স্ব-ইচ্ছায় ভারতীয় কোচ থেকে পদত্যাগ নিলে তার জায়গায় স্থলাভিষিক্ত হন তিনি। আর তার কোচিং মেয়াদ শেষের পথে হওয়ায় হিসাব নিকাশ চলছে তার সময়ে ভারতীয় দলের সাফল্য ব্যার্থতার।
নানা জল্পনা কল্পনা থাকলেও ভারতীয় ক্রিকেট বোর্ড বিসিসিআই এর পদক্ষেপে পরিষ্কার, শাস্ত্রীকে পুনর্বহাল না করার লক্ষ্যেই নতুন করে ক্রিকেট অ্যাডভাইসারি কমিটি তৈরি করা হল। এতেই কাঁটাছেড়া শুরু হয়ে গিয়েছে হেড কোচ হিসেবে শাস্ত্রীয় পারফরম্যান্সের। পরিসংখ্যানে চোখ বোলানো যাক। দ্বিতীয় বার কোচ হয়ে আসার পরে শাস্ত্রীর কোচিংয়ে ভারত ২০টি টেস্ট খেলেছে ভারত। এর মধ্যে জয়ের সংখ্যা ১০। হারের সংখ্যা ৭টি। ড্র ৩টিতে। ভালয় মন্দয় মেশানো এই পারফরম্য়ান্সের বড় ব্যাপার হল, অস্ট্রেলিয়ার মাটিতে প্রথমবার কোনও ভারতীয় দলের টেস্ট সিরিজ জয়। তবে এত বড় সাফল্য ম্লান হয়ে গিয়েছে, দক্ষিণ আফ্রিকা ও ইংল্যান্ডের মাটিতে শোচনীয় বিপর্যয়ে।
ওয়ানডে ক্রিকেটে, বিশ্বকাপের আগে শাস্ত্রীয় জামানায় ৫৮টি ম্যাচ খেলেছে ভারত। এর মধ্যে ৪২টিতেই জয় ভারতের। দক্ষিণ আফ্রিকা, অস্ট্রেলিয়া, নিউজিল্যান্ডের বিরুদ্ধে সিরিজ জয় একদিনের ক্রিকেটে বড় সাফল্য। এশিয়া কাপ জয় শাস্ত্রীর কোচিংয়ে বড় মুকুট। টি টোয়েন্টিতে ৩৩টির মধ্যে ২২টিতেই ভারত জিতেছে।
কোনো সন্দেহ নেই ভারতীয় কোচদের মধ্যে সবচেয়ে সফল তিনি। কিন্তু এত সফলতার মাঝেও প্রশ্ন রয়ে গেছে তার পেশাদারিত্ব নিয়ে। প্রশ্ন উঠেছে অধিনায়ক কোহলির প্রতি তার দুর্বলতা নিয়ে। সাম্প্রতিক ফর্ম বিবেচনা না করেই কোহলির সাজানো একাদশ মেনে নেন তিনি। আর সেই একাদশে জায়গা পায় সব কোহলির পছন্দের খেলোয়াড়েরা। কোহলির মতের বিরুদ্ধে যেতে না চাওয়ার মানসিকতাতেই তিনি সবথেকে ‘দুর্বল কোচ’, এমনটাই বলছে বিশেষজ্ঞ মহল। এখানেই স্বতন্ত্র ছিলেন অনিল কুম্বলে। সম্মান ও শ্রদ্ধায় তিনি আপামর ক্রিকেট দুনিয়ার কুর্নিশ আদায় করে নিয়েছিলেন কোচ থাকাকালীন। কোহলির সঙ্গে মতপার্থক্য হওয়ায় তিনি নিজের পদত্যাগ পত্রে স্পষ্ট লিখেছিলেন, পেশাদারিত্ব, শৃঙ্খলা, বহুমুখী দর্শন আমি ভারতীয় ক্রিকেটে এনেছিলাম। এখানেই সম্ভবত, সফল কোচ হয়েও পিছিয়ে পড়েছেন শাস্ত্রী।
রবি শাস্ত্রীর বেতন শুনলেও অবাক হবেন।আকাশছোঁয়া বেতনে তিনিই এখন সবচেয়ে বেশি পারশ্রমিক পাওয়া ক্রিকেট কোচ।একাধিক পত্র পত্রিকা ঘেঁটে দেখা যাচ্ছে, শাস্ত্রী বার্ষিক ৮ কোটি টাকা বেতন পেতেন। অনিল কুম্বলের থেকেও যা ১.৫ কোটি টাকা বেশি। কিন্তু ক্রিকেট বিশ্বকাপে সফল না হওয়ায় প্রশ্ন উঠেছে তার কোচিং মান ও পারশ্রমিক নিয়ে। তাই দ্বিতীয়বার কোচ হওয়ার আশা না করে ধারাভাষ্যে ফেরাই হবে শাস্ত্রীর জন্য সম্মানজনক।