বাংলাদেশি বংশোদ্ভূত ফুটবলারদের কথা বলতে গেলে সবার আগে যে নাম উঠে আসে, তিনি হলেন হামজা দেওয়ান চৌধুরী। ১৯৯৭ সালের ১ অক্টোবর ইংল্যান্ডের লাফবোরোতে তার জন্ম। জন্মসূত্রে তিনি ব্রিটিশ, তবে তার রক্তে মিশে আছে বাংলাদেশ ও ক্যারিবীয় সংস্কৃতির মিলন। বাবার দিক থেকে বাংলাদেশি আর মায়ের দিক থেকে গ্রেনাডিয়ান হওয়ায় ছোটবেলা থেকেই বহুসাংস্কৃতিক পরিবেশে বেড়ে ওঠেন হামজা।
হামজার পরিবার লাফবোরোতে থাকলেও শেকড় ছড়িয়ে আছে বাংলাদেশে। তার দাদু-দাদি সিলেট থেকে ইংল্যান্ডে গিয়ে স্থায়ী হন। সেই সূত্রেই তিনি প্রবাসী বাংলাদেশি কমিউনিটির অংশ হয়ে বড় হয়েছেন। ছোটবেলা থেকেই ফুটবলের প্রতি ছিল গভীর টান। স্থানীয় মাঠেই প্রথমে খেলতে শুরু করেন, এরপর ধীরে ধীরে বয়সভিত্তিক প্রতিযোগিতায় নিজের প্রতিভার ঝলক দেখাতে থাকেন।
হামজা সাধারণ পড়াশোনার পাশাপাশি ফুটবলের প্রতি মনোযোগী ছিলেন। খুব অল্প বয়সেই লেস্টার সিটির একাডেমিতে যোগ দেন। একাডেমিতে থাকার সময়েই তার শৃঙ্খলা, খেলার প্রতি ভালোবাসা ও পরিশ্রম তাকে আলাদা করে চিনিয়ে দেয়। পড়াশোনার পাশাপাশি ক্রীড়া-শিক্ষা দুই ক্ষেত্রেই সমানভাবে মনোযোগী ছিলেন তিনি।
আরও পড়ুন: লিওনেল মেসি: কিংবদন্তি ফুটবলারের জীবন, অর্জন ও বিশ্বজয়ের গল্প
২০১৫ সালে মাত্র ১৮ বছর বয়সে লেস্টার সিটির হয়ে পেশাদার ফুটবলে আত্মপ্রকাশ করেন হামজা। মিডফিল্ডার হিসেবে তিনি দারুণ দৃঢ় ও পরিশ্রমী খেলোয়াড়। মাঠে তার উপস্থিতি, বল দখলের দক্ষতা এবং ট্যাকল করার পারদর্শিতা দ্রুত নজর কাড়ে। লেস্টার সিটির জার্সি গায়ে তিনি প্রিমিয়ার লিগ, এফএ কাপসহ নানা টুর্নামেন্টে খেলেছেন। ২০২১ সালে লেস্টারের হয়ে এফএ কাপ জয়ের সময়ও দলের গুরুত্বপূর্ণ অংশ ছিলেন তিনি।
বর্তমানে তিনি লেস্টার সিটির মূল স্কোয়াডের একজন নির্ভরযোগ্য খেলোয়াড়। তার সাফল্য শুধু ক্লাব পর্যায়েই সীমাবদ্ধ নয়; ইংল্যান্ডের বয়সভিত্তিক জাতীয় দলে খেলেছেন তিনি।

খেলাধুলার বাইরে হামজা সামাজিক কাজেও সম্পৃক্ত। তিনি নিয়মিতভাবে বাংলাদেশি কমিউনিটির সাথে যুক্ত থাকেন এবং তরুণদের খেলাধুলায় আগ্রহী করতে ভূমিকা রাখেন। পরিবার, সংস্কৃতি ও শিকড়ের প্রতি তার গভীর টান রয়েছে। তিনি প্রায়ই নিজের বাংলাদেশি পরিচয় নিয়ে গর্ব প্রকাশ করেন।
হামজা চৌধুরী শুধু একজন ফুটবলার নন, বরং তিনি প্রবাসী বাংলাদেশি তরুণদের জন্য এক অনন্য প্রেরণা। ইংল্যান্ডের মাঠে লড়াই করলেও তার শেকড় ছোঁয়া বাংলাদেশে। এ কারণে দেশের ক্রীড়াপ্রেমীরাও তাকে নিজেদের সন্তান বলে মনে করেন।
হামজা চৌধুরীর জীবনপথ যেন এক সেতুবন্ধন বাংলাদেশি শেকড়, ক্যারিবীয় ঐতিহ্য আর ব্রিটিশ ফুটবলের পেশাদার জগৎকে মিলিয়ে তৈরি করেছেন নিজস্ব এক অনন্য পরিচয়। জন্মদিনে তাই তাকে শুভেচ্ছা জানানো শুধু একজন ফুটবলারের প্রতি শ্রদ্ধা নয়, বরং একজন প্রবাসী বাংলাদেশি তরুণের সাফল্যের কাহিনি উদযাপনও বটে।