ডিপিএল শেষ করে বিশ্বকাপ দলের সঙ্গে অনুশীলন শুরু করার আগে নড়াইলে যান সংসদ সদস্য ও বাংলাদেশ ওয়ানডে দলের অধিনায়ক মাশরাফি বিন মর্তুজা। তবে পরিবারের সঙ্গে সময় কাটাতে নয়। নির্বাচনী এলাকায় সফর করে সেখানের সমস্যা চিহ্নিত করে সমাধান করতে। তবে ববাবরই মানুষের দিকে নজর রাখা মাশরাফি নিজের এলাকায় অনিয়ম দেখে বাঁধিয়েছেন লঙ্কাকান্ড।
২৫ এপ্রিল বৃহস্পতিবার দুপুর সাড়ে ৩ টা থেকে সাড়ে ৫টা পর্যন্ত টানা ২ ঘন্টা নড়াইল আধুনিক সদর হাসপাতালে ঝটিকা সফর করেন মাশরাফি। এবার জনপ্রতিনিধি মাশরাফিকে নড়াইলবাসী দেখলো সম্পূর্ণ ভিন্ন চরিত্রে।
এ সময় নারী ও শিশু ওয়ার্ডে রোগীদের সাথে কথা বলে তাদের কাছ থেকে নানা ধরনের সমস্যা শোনেন তিনি। ওই সময় পুরো হাসপাতালে মাত্র একজন ডাক্তারের উপস্থিতি দেখতে পেয়ে ক্ষিপ্ত হয়ে ওঠেন মাশরাফি। সদর হাসপাতালের পুরুষ ওয়ার্ডে মাত্র ২ জন নার্স দেখে তাদের ডিউটির ব্যাপারে খোজ নেন। জানতে পারেন হাসপাতালে পর্যাপ্ত নার্স থাকলেও ২-১ জন নার্স দিয়েই বিভিন্ন ওয়ার্ড পরিচালিত হচ্ছে।
তাৎক্ষণিক নিচে নেমে এসে নার্সিং সুপারভাইজারদের খোঁজ করেন মাশরাফি। নার্সদের কক্ষে তালা দেখতে পেয়ে টেলিফোনে দায়িত্বপ্রাপ্তদের সঙ্গে যোগাযোগ করার চেষ্টা করেন। একজন সুপারভাইজারের ফোন বন্ধ পাওয়া যায় এবং অপরজনের ফোন খোলা থাকলেও রিসিভ করেননি। এরপর মাশরাফি পুনরায় দোতলায় এসে ডাক্তারদের অবস্থান জানতে চেয়ে হাজিরা খাতা দেখেন।
হাজিরা খাতায় সার্জারী চিকিৎসক সিনিয়র কনসালটেন্ট ডা. আকরাম হোসেনের ৩ দিনের অনুপস্থিতির প্রমাণ পেয়ে ছুটির আবেদন দেখতে চান। পরে জানতে পারেন ছুটি ছাড়াই সেই ডাক্তার ৩ দিন অনুপস্থিত!
এ সময় ক্ষিপ্ত হয়ে টাইগার ক্যাপ্টেন প্রথমে রোগী সেজে ওই চিকিৎসককে ফোন করলে তিনি রোগীকে অর্থাৎ মাশরাফিকে রবিবার হাসপাতালে এসে চিকিৎসা নিতে বলেন।
পরে নিজের পরিচয় দিয়ে মাশরাফি ডাক্তারকে বলেন, ‘এখন যদি হাসপাতালের সার্জারি প্রয়োজন হয় তাহলে সেই রোগী কী করবে? চুপ করে আছেন কেন? আপনি কি ফাইজলামি করেন? চাকরি করলে নিয়ম মেনেই করবেন।’ এরপর মাশরাফি সেই ডাক্তারকে তার কর্তব্যর কথা স্মরণ করিয়ে দিয়ে দ্রুত কর্মস্থলে ফিরে আসার নির্দেশ দেন।
রোগীদের অনুরোধে হাসপাতালের বাথরুম ও তার পরিবেশ নিজে দেখেন এবং মোবাইলে ছবি তুলে নেন। কয়েকটি বাথরুমের দরজা ভাঙা এবং দুর্গন্ধ থাকায় অত্যন্ত বিব্রত বোধ করেন তিনি।
নড়াইল-২ আসনের সংসদ সদস্য মাশরাফি বিন মর্তুজা এ ব্যাপারে জানার জন্য আবাসিক মেডিকেল অফিসারকে ফোন করতে বলেন। অফিস সহকারী কাম কম্পিউটার অপারেটর বিথী খাতুন এ সময় অফিসে উপস্থিত থেকে মাশরাফির নানা প্রশ্নের জবাব দেন।
এমন ভূমিকায় দারুণ প্রশংসিত হয়েছেন নড়াইল-২ আসনের সাংসদ। এমপির এসব কার্যক্রম ইতোমধ্যে ফেসবুকে ভাইরালও হয়েছে।
হঠাৎ নিজের পরিদর্শনের ব্যাপারে সংসদ সদস্য মাশরাফি বলেন, ‘সাধারণ মানুষের জন্য কয়েকটি গুরুত্বপূর্ণ বিষয়ের একটি হলো চিকিৎসা। এই সেবার মান নিশ্চিত করতে আমার যা কিছু করার আমি সবই করব। কিছু মানুষের জন্য নিরীহ জনগন কষ্ট পাবে এটা সহ্য করা হবে না।