ওপেনার রোহিত শর্মার দুর্দান্ত সেঞ্চুরির পরও শনিবার অস্ট্রেলিয়ার কাছে সিরিজের প্রথম ওয়ানডেতে হারতে হলো সফরকারী ভারতকে। সিডনিতে অসিদের কাছে ৩৪ রানে হারলো ২-১ ব্যবধানে টেস্ট সিরিজ জয় করা বিরাট কোহলির ভারত। ফলে তিন ম্যাচের সিরিজে ১-০ ব্যবধানে এগিয়ে গেল অস্ট্রেলিয়া।
অস্ট্রেলিয়ার কাছে এই জয়ের গুরুত্ব ছিল একটু আলাদা। তিন ফরম্যাট মিলে ক্রিকেট ইতিহাসে প্রথম দল হিসেবে এক হাজারতম জয় পেয়েছে অস্ট্রেলিয়া। এই ঐতিহাসিক ম্যাচে অসি দলের খেলোয়াড়রা ১৯৮৬ সালের জাতীয় দলের জার্সি পরে স্মরণ করেন সোনালী যুগকে। সেবার ভারতের বিপক্ষে ঘরের মাঠে এমন জার্সি পরেই মাঠে নেমেছিল অসিদের সাবেক অধিনায়ক অ্যালান বর্ডার।
ঐতিহাসিক ম্যাচে টসে জিতে ব্যাটিংয়ের সিদ্ধান্ত নেয় ভারত। তবে ইনিংসের তৃতীয় ওভারেই উইকেট হারায় অস্ট্রেলিয়া। অধিনায়ক অ্যারন ফিঞ্চ ৬ রান করে ভারতের পেসার ভুবেনশ্বর কুমারের বলে আউট হন। এরপর পরিস্থিতি সামাল দিয়েছেন আরেক ওপেনার অ্যালেক্স ক্যারি ও উসমান খাজা। ৩৩ রানের জুটি গড়েন তারা। ক্যারিকে ব্যক্তিগত ২৪ রানে থামিয়ে দেন বাঁ-হাতি স্পিনার কুলদীপ যাদব।
দুই ওপেনার ব্যাট হাতে ব্যর্থ হলেও, অস্ট্রেলিয়ার পরের চার ব্যাটসম্যান ঠিকই রানের দেখা পেয়েছেন। উমসান খাজা, শন মার্শ ও পিটার হ্যান্ডসকম্ব হাফ-সেঞ্চুরি পেলেও, মার্কাস স্টোয়িনিস অর্ধশতকের দ্বারপ্রান্ত পর্যন্ত পৌঁছে গিয়েছিলেন।
তৃতীয় উইকেটে খাজাকে নিয়ে ৯২ ও চতুর্থ উইকেটে হ্যান্ডসকম্বকে নিয়ে ৫৩ রানে জুটি গড়েন মার্শ। খাজা ৬টি চারে ৮১ বলে ৫৯ ও মার্শ ৪টি চারে ৭০ বলে ৫৪ রান করে ফিরেন।
খাজা-মার্শের বিদায়ের পরও অস্ট্রেলিয়ার রান তোলার গতি কমে যায়নি। স্টোয়িনিসকে নিয়ে মারমুখী মেজাজে ব্যাট চালান হ্যান্ডসকম্ব। দলকে বড় সংগ্রহ এনে দিতেই ভারতীয় বোলারদের উপর চড়াও হন হ্যান্ডসকম্ব ও স্টোয়িনিস। শেষ পর্যন্ত পঞ্চম উইকেটে স্টোয়িনিস ও হ্যান্ডসকম্ব ৬৮ রান উপহার দেন অস্ট্রেলিয়াকে। ফলে বড় সংগ্রহে পথ পেয়ে যায় অসিরা। আর শেষদিকে স্টোয়িনিস ও গ্লেন ম্যাক্সওয়েল মাত্র ১৬ বলে অবিচ্ছিন্ন ৩৪ রান যোগ করে অস্ট্রেলিয়াকে ৫০ ওভারে ৫ উইকেটে ২৮৮ রানের সংগ্রহ এনে দেন।
হ্যান্ডসকম্ব ৬টি চার ও ২টি ছক্কায় ৬১ বলে ৭৩, স্টোয়িনিস ২টি করে চার ও ছক্কায় ৪৩ বলে অপরাজিত ৪৭ এবং ম্যাক্সওয়েল ৫ বলে অপরাজিত ১১ রান করেন। ভারতের ভুবেনশ্বর ও কুলদীপ ২টি করে উইকেট নেন।
জয়ের জন্য ২৮৯ রানের লক্ষ্যে শুরুটা মোটেও ভালো হয়নি ভারতের। প্রথম ২৩ বলে স্কোর বোর্ডে ৪ রান উঠতেই ৩ উইকেট হারিয়ে বসে টিম ইন্ডিয়া। ওপেনার শিখর ধাওয়ান শুন্য, অধিনায়ক বিরাট কোহলি ৩ ও আম্বাতি রাইডু শূন্য রানে প্যাভিলিয়নে ফিরেন। ভারতের পতন হওয়া তিন উইকেটের দু’টি নিয়েছেন জেই রিচার্ডসন। অন্যটি নেন অভিষেক ম্যাচ খেলতে নামা জেসন বেহরেনডর্ফ।
শুরুতে খাদের কিনারায় পড়ে যাওয়া ভারতকে টেনে তোলার দায়িত্ব নেন আরেক ওপেনার রোহিত শর্মা ও সাবেক অধিনায়ক মহেন্দ্র সিং ধোনি। অস্ট্রেলিয়ান বোলারদের রোহিত পাল্টা আক্রমণ করলেও অন্যপ্রান্তে ধোনি ছিলেন বেশ সর্তক। বেশ ধীর লয়ে রান তুলতে থাকেন তিনি। তাই ৩২ ওভার শেষে ১৪০ রানে পৌঁছে যায় ভারত।
তবে ৩৩তম ওভারে বিদায় নেন ধোনি। বেহরেনডর্ফের বলে লেগ বিফোর হবার আগে ৯৬ বলে ৫১ রান করেন ধোনি। তার ইনিংসে ৩টি চার ও ১টি ছক্কা ছিলো। চতুর্থ উইকেটে রোহিতের সাথে ১৭২ বলে ১৩৭ রান যোগ করেন তিনি। ধোনির বিদায়ে উইকেটে বেশিক্ষণ টিকতে পারেননি দিনেশ কার্তিক। ২১ বলে ১২ রান করেন তিনি।
এক প্রান্ত দিয়ে সতীর্থদের যাওয়া-আসা দেখলেও দমে যাননি রোহিত। অন্যপ্রান্ত দিয়ে ঠিকই ওয়ানডে ক্যারিয়ারের ২২তম সেঞ্চুরি তুলে নেন রোহিত। এতে ভারতের শেষ ভরসা হিসেবে উইকেটেই ছিলেন তিনি। দলকে লক্ষ্যের দিকে এগিয়ে নেয়ার চেষ্টায় ছিলেন রোহিত।
কিন্তু ৪৬তম ওভারে ও দলীয় ২২১ রানে থামতে হয় রোহিতকে। স্টোয়িনিসের বলে বিদায় নেন ১২৯ বলে ১৩৩ রান করা রোহিত। তার ইনিংসে ১০টি চার ও ৬টি ছক্কা ছিলো।
রোহিতের বিদায়ের পর ভারতের সব আশা শেষ হয়ে যায়। ৫০ ওভারে ৯ উইকেটে ২৫৪ রান পর্যন্ত সংগ্রহ করে টিম ইন্ডিয়া। শেষদিকে ভুবেনশ্বর অপরাজিত ২৯ রান করে ভারতের হারের ব্যবধান কমিয়েছেন। অস্ট্রেলিয়ার রিচার্ডসন ২৬ রানে ৪ উইকেট নেন। তাই ম্যাচ সেরাও তিনি।
অ্যাডিলেডে আগামী ১৫ জানুয়ারি অনুষ্ঠিত হবে সিরিজের দ্বিতীয় ওয়ানডে।